মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

অবসরে গেলেন আলো ছড়ানো অধ্যক্ষ সমীর দত্ত

পানছড়ি সংবাদদাতা
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে নিজের জন্মদিনে অবসরজনিত বিদায় নিয়েছেন অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা। তিনি পানছড়ি সরকারি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শান্তিময় চাকমা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ১৯৯২ সালে পানছড়ি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাসঙ্কুল অস্থিরতা, অস্থিতিশীল পরিবেশে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত সীমান্তবর্তী এক পিছিয়ে পড়া উপজেলা, পানছড়ির অনগ্রসর মানুষের জন্য পানছড়ি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভাইবোনছড়া কলেজ, পানছড়ি মহিলা কলেজ,পানছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৬৩ সালের জুলাইয়ের ৫ তারিখে জন্ম নেওয়া এই সমাজহিতৈষী, দীর্ঘ ৩২ বছর কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে অবসরে গিয়েছেন।

বুধবার বেলা ১১টায় কলেজের আয়োজনে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া আফরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, কথাসাহিত্যিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা (আজাদ বুলবুল), সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন, চট্টগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দিন শিশির, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিলোৎপল খীসা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা, উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বকুল চন্দ্র চাকমা, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য সতীশ চন্দ্র চাকমাসহ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ।

বিদায়কালে অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরে প্রধান অতিথি মাউশির চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমি এই কলেজেরই শিক্ষক ছিলাম। নানান চড়াই-উৎরাই দেখেছি। বিনা বেতনে আমরা এই কলেজের মাসের পর মাস শ্রম দিয়েছি। আজ এর বাড়ি তো, কাল ওর বাড়িতে খেয়েছি। সেই সময়ের বিরাজমান পরিস্থিতিতে, প্রত্যন্ত এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলা সহজ বিষয় ছিল না। অধ্যক্ষ সমীর দত্ত ও অন্যন্যরা এগিয়ে না এলে পানছড়ি কলেজটি প্রতিষ্ঠা এবং তারপর আজ এই পর্যায়ে আসতে পারতো কি-না সন্দেহ।’

বিদায়ী অধ্যক্ষ তাঁর অবসরোত্তর জীবনে সমাজ ও দেশের জন্য আরও বড় পরিসরে কাজ করে যাবেন-এই আশাবাদ ব্যক্ত করে অন্যান্য অতিথিগণ বলেন, “পানছড়ির মতো দুর্গম একটি উপজেলার শিক্ষার বিস্তারে অধ্যক্ষ সমীর দত্ত যা করেছেন, তা অতুলনীয়। প্রতিকূল পরিবেশে নানান প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, বিভিন্ন দিক সামলিয়ে ওই সময়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সমন্বয় করা ছাড়া একটি কলেজ স্থাপন করা সম্ভব ছিল না। অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা, মানুষের কল্যাণে সেই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন।’

বিদায়ী অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা বলেন, ‘আমি চলার পথে যাদের সহযোগিতা, ভালোবাসা পেয়েছি তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এই দীর্ঘ চলার পথে অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে, দায়িত্বের খাতিরে অনেকের সঙ্গেই হয়তো কঠোর হয়েছি। এসব বিষয়াদি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার অবসরোত্তর জীবনে দেশ ও মানুষের জন্য যেন আরও ভালোভাবে কাজ করে যেতে পারি সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

বিদায়ী অধ্যক্ষের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এসময় বক্তারা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক, পানছড়ি সদর ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান মরহুম ডা. হাবিবুর রহমান, মরহুম শফি চেয়ারম্যান,প্রয়াত মধু মঙ্গল চাকমা, প্রয়াত চইলাপ্রু চৌধুরী,মরহুম শিক্ষক আলী হোসেন মাহমুদ, প্রয়াত শিক্ষক আশীষ, প্রয়াত শিবু নারায়ণ পাল, প্রয়াত মিন্টু বিকাশ চাকমা প্রমুখের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন।

বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিদায়ী অধ্যক্ষের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন নেয়ামত উল্লাহ রিপন ও বাবুল কায়সার। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদেরকে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ এবং শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে ফুল ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর