স্পেশাল করেসপনডেন্ট
রাঙামাটি: জেলা শহরের একটি ঐতিহাসিক নৌ-পথ পুনরুদ্ধারে খাল খনন শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ১১ মিটার প্রশস্ত করে খাল খনন শেষে জেলা শহরের মাঝেরবস্তি কাশেমবাজার থেকে তবলছড়ি বাজারের ব্রিজ পর্যন্ত আগের মতোই এই খালে নৌ-যান চলাচল করতে পারবে বলে জানিয়েছে পাউবো। তবে নৌ-পথ পুনরুদ্ধারে খাল খননের উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও খালের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ দাবি পরিবেশকর্মীদের।
পাউবো রাঙামাটি জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জেলা শহরের মাঝেরবস্তি কাশেমবাজার থেকে তবলছড়ি বাজারের ব্রিজ পর্যন্ত সংযোগ খালটি খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এই প্রকল্পের আওতায় ৩৫০ মিটার খাল খনন করা হবে; যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। ১১ মিটার প্রশস্ত করে খাল খননের কার্যাদেশ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শুভাঙ্কর চাকমা। ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া খনন কাজ আগামী ৩০ জুনের (৩ মাস) মধ্যে শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছে পাউবো।
সম্প্রতি বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, এক্সক্যাভেটর দিয়ে খাল খনন কাজ শুরু হয়েছে। মাঝেরবস্তি কাশেমবাজারের পেছন দিক থেকে খনন কাজ শুরু হয়েছে। তবে একটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে সরু করে খালের মাঝ বরাবর পানির গতিপথ চালুর চেষ্টা করছে পাউবো। তবে খালের পাড়ে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট তৈরি করে বেদখলে নিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তি ও প্রভাবশালীরা।
পরিবেশকর্মীরা জানায়, খাল খননের ফলে নৌ-পথ পুনরুদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও বেদখলের কারণে খালটি সংকুচিত হয়ে আছে। সেজন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে খালটির পুরনো গতিপথ পুনরুদ্ধার হবে না। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছে বিশিষ্টজনরা।
পরিবেশবাদীরা জানান, খাল খনন সাময়িক স্বস্তিদায়ক মনে হলেও দীর্ঘ মেয়াদি ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত খালের প্রকৃত গতিপথ ঠিক করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো ফল আসবে না। খালের পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের প্রকৃত গতিপথ ঠিক করতে হবে, তবেই খনন কাজের পূর্ণ সফলতা আসবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রাঙামাটি জেলা সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার শিজক ডটকমকে জানান, এই খালটি মাঝেরবস্তি কাশেমবাজার থেকে তবলছড়ি বাজার পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একসময় পুরাতন রাঙামাটির মানুষ এই খাল ব্যবহারের মাধ্যমে নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন। তবে ভরাট না বেদখলের কারণে এটি মৃতপ্রায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খননের যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি ইতিবাচক দিক। আমরা চাই এই কাজের যথাযথ বাস্তবায়ন হোক। একইসঙ্গে সঙ্গে যারা বেদখলের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে খালটি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা শিজক ডটকমকে জানান, স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এ মাস থেকে খনন কাজ শুরু হয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। এ কাজের আওতায় ১১ মিটার চওড়া করে মাঝেরবস্তি থেকে তবলছড়ি সেতুর নিচ পর্যন্ত ৩৫০ মিটার খাল খনন হবে। খনন করা মাটিগুলো সেখান থেকে তুলে নেয়া হবে। খননের পর মাটিগুলো ব্যবহারে জন্য একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যারা মাটি নিয়ে যাবেন।
তবে খালের পাড়ের অবৈধ স্থাপনা ও বেদখলদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে খাল বেদখলের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা গ্রহণের জন্য জানিয়েছি। প্রশাসন বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে।’
রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিজক ডটকমকে বলেন, ‘খালের পাড়ে অবৈধভাবে বেদখলের বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। আমার কাছে কেউ আসেননি, আমি বিষয়টি জানি না। তবুও আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব।’