মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

‘একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে’

শিজক ডেস্ক
চট্টগ্রাম: রাউজানের একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে- বলে মন্তব্য করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। তিনি রাউজানে হৃদয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টম্বর ২০২৩) বিকালে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন পাহাড়ি সংগঠনের এক সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।  বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী এই সমাবেশ করে।

‘সকল গণতান্ত্রিক শক্তি জাগ্রত হও, পাহাড়িদের বিরুদ্ধে নর-মাংস খাওয়ার গুজব, হয়রানি, নির্যাতন ও অপদস্ত করা বন্ধ কর’ স্লোগানে চট্টগ্রামের রাউজানে শিবলি সাদিক হৃদয়ের হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি প্রদান এবং এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে পাহাড়িদের সম্পর্কে গুজব রটনাকারী ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ডিসি হিল থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি শুভ চাক’র সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল চট্টগ্রাম পূর্ব-৩ এর সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূলন ভৌমিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, গণ অধিকার চর্চা কেন্দ্রের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান খান, সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকার রিপোর্টার নীলা চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক আবির ইসলাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সুদেব চাকমা।

সমাবেশে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তারা অংশগ্রহণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে যদি পাহাড়িরা অংশগ্রহণ না করতো তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম আমরা দখল করতে পারতাম না। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে এদেশের সংখ্যালঘুরা অবহেলিত। আজকের একটি হত্যাকণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।”

অ্যাডভোকেট ভূলন ভৌমিক বলেন, “কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তার নিশ্চয় প্রচলিত আইন-আদালতের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি হবে। কিন্তু গ্রেফতার অবস্থায় পুলিশের হেফাজত থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে কেন হত্যা করা হলো প্রশাসনকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। আমরা রাউজানে সিবলি সাদিক হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় জড়িতরা যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে আদালতের মাধ্যমে তাদের নিশ্চয় বিচার ও শাস্তি হবে।”

সমাবেশে নীলা চাকমা বলেন, “পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা যখন সমতলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে আসে তখন সমতলবাসীদের কাছ থেকে নানা হেনস্তার শিকার হতে হয়। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে, বাজার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও একইভাবে হেনস্তার শিকার হন। সাম্প্রতিক হৃদয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষী বক্তব্য উত্থাপন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে পাহাড়িদের দেখলে “মানুষ খেকো, মানুষ খাওয়া পাহাড়িরা বাঙালিদের বন্ধু হতে পারে না” ইত্যাদি বলে অপমান করা হচ্ছে। এসব ঘটনা খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।”

“হৃদয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর আমি সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ দেওয়ার জন্য কয়েকজনকে বলেছিলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। জাতির ওপর এমন বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলার মত কেউ এগিয়ে আসেনি।”- অভিযোগ করেন নীলা।

সমাবেশ থেকে বক্তারা হৃদয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দুষ্কৃতিকারীদের বিচার ও শাস্তি এবং পাহাড়িদের সম্পর্কে গুজব রটনাকারী ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

বিজ্ঞপ্তি

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর