প্রান্ত রনি, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
রাঙামাটি: হঠাৎ করেই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলায় রাতের বেলায় সড়কে যানবাহনে যাতায়াতে। এক সপ্তাহের মধ্যে রাঙামাটিতে দুইটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা আগুনে পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এতে করে এসব সড়কে রাতের বেলায় চলাচলে অনিরাপদ হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরাও জীবনশঙ্কায় ভুগছেন। তবে এসব ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি চান না শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ার দিচ্ছেন তারা। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, সামগ্রিক বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাত ৯টার দিকে জেলার কাপ্তাইয়ের বরইছড়ি-ঘাগড়া সড়কে যাত্রীবেশে দুই ব্যক্তি চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান বাজার থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। পথিমধ্যে ‘বন্দুক দেখিয়ে’ চালককে বরইছড়ি-ঘাগড়া সড়কে নিয়ে আসতে বাধ্য করে। এরপর বরইছড়ি-ঘাগড়া সড়কের কুকিমারা এলাকায় একটি আম বাগানে অটোরিকশাটি নিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুই দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। জড়িতদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে, গত শুক্রবার (৯ জুন) রাতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাপছড়ি ইউনিয়নের দেপ্পোছড়িতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পোড়ানোর হয়েছিল। ওই অটোরিকশার চালক বানেশ্বর দাশ জানিয়েছিলেন, ‘ওইদিন জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপা থেকে কয়েকজন যাত্রীমিলে ঘাগড়া বাজার পর্যন্ত একটি গাড়ি (অটোরিকশা) ভাড়া করেন। দেপ্পোছড়ি পৌঁছানোর পর একজন গাড়ি দাঁড় করানোর জন্য সিগন্যাল দেন। গাড়ি দাঁড় করানোর পর চাঁদার টোকেন দেখতে চান। টোকেন দেখাতে না পারায় মারধর করে পরে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে চলে যায়।’
এ ঘটনায় পর শুক্রবার (৯ জুন) রাতে তাৎক্ষনিকভাবে জেলা শহরের একমাত্র অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল রাঙামাটি জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা ও ক্ষতিপূরণের জন্য প্রশাসনকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে সমিতি। এই ঘটনার সপ্তাহের মাথায় আরেকটি অটোরিকশা পুড়ানোর ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার জেলার কাপ্তাইয়ে।
এর আগে, ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের জীবতলী আগরবাগান এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা পুড়িয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। তখন অটোরিকশা চালকের বাৎসরিক ‘চাঁদার টোকেন’ না থাকার অভিযোগে অটোরিকশা পুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছিল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এ ঘটনার পর প্রায় ৯ মাস এই ধরণের অপ্রীদিকর ঘটনা ন ঘটলেও গত ৯ ও ১৫ জুন রাতে আরো দুইটি অটোরিকশা পুড়ানোর ঘটনায় চালকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত দুইটি পৃথক ঘটনায় জড়িত কাউকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা অটোরিকশা চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু শিজক ডটকমকে বলেন, ‘চালকদের জীবন এখন হুমকির মুখে। তাদের জীবন শঙ্কা নিয়ে রাস্তার বেরুতে হয়। বার-বার সিএনজি অটোরিকশা পুড়িয়ে দেবে আর আমরা প্রতিবাদ জানাব আন্দোলন করব- এভাবে আর কত? এর একটা সমাধান দরকার। আমরা শীঘ্রই বৃহৎ আন্দোলন কর্মসূচির দিকে যাবে।’
হঠাৎ করে রাঙামাটি জেলায় প্রায় একই সময়ে দুইটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রাতের বেলায় সড়ক যাতায়াত ব্যবস্থা অনিরাপদ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। তবে দুইটি ঘটনায় ‘চাঁদা আদায়ের টোকেন’ চাওয়ার কথা উঠে আসলেও সর্বশেষ ঘটনার কারণ জানা যায়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে কিনা? এমনটা ভাবছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ শিজক ডটকমকে বলেন, ‘গত সপ্তাহ আর বৃহস্পতিবার দুটি ঘটনাই প্রায় একইভাবে ঘটেছে। যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে একপর্যায়ে গাড়ি থামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। দুইটি আগুনের ঘটনার পরই আমরা ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলেছি। একটি ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাতেও আলোচনা হয়েছে। আমরা শীঢ়্রই সামগ্রিক একটা ব্যবস্থা নেব।’
এসপি আরও বলেন, ‘দুইটি ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়েছে এবং ওইসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর টইল আরো বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া রাতের বেলা সড়কের আলোর ব্যবস্থা আরো বৃদ্ধির জন্য বলা হয়েছে।’
রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিজক ডটকমকে বলেন, ‘উদ্ভূত বিষয়টি নিয়ে আমাদের জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি পাহাড়ে যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, তারাই এসব ঘটনা সংঘটিত করছে। এসব বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
রাতের বেলা সড়কে চলাচল অনিরাপদ হয়ে উঠছে কিনা জানতে চাইলে জেলাপ্রশাসক বলেন, ‘এই বিষয়টিই আমরা ভাবছি। এসব সড়ক নিরাপদ করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর টইল আরো বাড়াতে হবে।’