শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

‘এসিআরে নাম্বার কম দেওয়ায়’ ব্যবস্থাপককে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি!

শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: ‘অ্যানুয়াল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্টে’ (এসিআর) নাম্বার কম দেওয়ায় কেন্দ্র ব্যবস্থাপককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে বিএফডিসির রাঙামাটি বিপণনকেন্দ্রে। এদিকে, সকালে এই ঘটনার পরপরই ওইদিন বিকালে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) চেয়ারম্যান বরাবর অধঃস্তন ‘কর্মকর্তার অসদাচরণ প্রসঙ্গে’ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক।

মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকাল ১০টায় কেন্দ্রের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম কেন্দ্র ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি কেন্দ্র ব্যবস্থাপককে তাঁর (হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা) ‘অ্যানুয়াল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্টে’ (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) মার্কস কম দেয়া হয়েছে কেন? এর উত্তর জানতে চান। পরে ব্যবস্থাপক জানায় যে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার এসিআরে তিনি খারাপ কিছু লেখেননি এবং যথাযথ নাম্বার দেয়া হয়েছে। এসিআর তো গোপন বিষয়, তোমাকে কে জানালো আমি কম নাম্বার দিয়েছি? এরপর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জানান যে, তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে বিষয়টি জেনেছেন এবং কেন্দ্র ব্যবস্থাপককে তাঁর এসিআর রিপোর্ট বদল করে পুনরায় পাঠাতে বলেন। পরে ব্যবস্থাপক জানায়, এটা নিয়মের মধ্যে পড়ে না, আমি পারব না। সে মূহূর্তে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রতি উত্তরে বলেন, আপনি যদি আমার এসিআর পরিবর্তন না করেন তাহলে আপনার এলপিসিও আমার হাতে রয়েছে; আমি দেখব আপনি কিভাবে এলপিসি নেন।

এদিকে, সকালের এই ঘটনার পর ওইদিন কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বিপণনকেন্দ্রের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিএফডিসি চেয়ারম্যান বরাবরে ‘অসদাচরণ প্রসঙ্গে’ একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি বিপণনকেন্দ্রের একাধিক সূত্র ও ব্যবস্থাপক নিজেও নিশ্চিত করেছেন।

বিপণনকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অধঃস্তন কর্মকর্তার ‘অসদাচরণের’ ঘটনায় পুরো বিএফডিসি বিপণনকেন্দ্রে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক পদে রদবদল করা হয়েছে। বর্তমান কর্মস্থলে চাকরিরত অবস্থার শেষ সময়ে এসে এ ধরণের ঘটনায় ‘বিব্রত’ অবস্থায় রয়েছেন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক।

এদিকে, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম শিজক ডটকমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের একেবারেই গোপনীয় বিষয়। এটিকে কেন্দ্র করে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আমাকে চার্জ করে এবং আমার সঙ্গে অসদাচারণ করে। তার বিষয়টি নিয়ে আমি হেড অফিসে (বিএফডিসি) লিখিত দিয়েছি। আপাতত খোলাখুলি কিছু বলতে চাচ্ছি না।’

তবে যার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ, সেই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিপণনকেন্দ্রে এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। স্যারের (বিএফডিসি ব্যবস্থাপক) সঙ্গে আমার ঝামেলা হবে কেন?’

প্রসঙ্গত, রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত বিশালাকার কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। ষাটের দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এই হ্রদের সৃষ্টি হলেও দেশের মৎস্য সম্পদ উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে হ্রদটি। আর পুরো হ্রদের মাছ উৎপাদন ও হ্রদ দেখাভালের দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ঘাড়ে। বিএফডিসি হ্রদের আহরিত মাছ হতে রাজস্ব আদায় করে থাকে। চারটি বিপণনকেন্দ্রের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্র।

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর