শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্বাদু পানির কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদকে পুনঃযৌবনে ফেরত আনতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘ঢাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি, আপা কাপ্তাই হ্রদ থেকে আপনার জন্য কিছু মাছ প্রসেসিং করে ‘রেডি টু কুক’ করে আমাদের মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রেডি করেছে আপনাকে দেওয়ার জন্য। তিনি বললেল, হ্যাঁ এটা তো বিশেষত চাকরিজীবী মহিলাদের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু আমার এখানে এসে মনে হচ্ছে এই কথার সঙ্গে সংগতি খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আপনাদের কাছে দো-হাই আল্লাহর। এই কাপ্তাই হ্রদকে পুনঃযৌবনে ফেরত আনতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা যদি থাকে তাহলে এই কাপ্তাই হ্রদকে আবার পূর্বের অবস্থায় ফেরত আনা সম্ভব।’
শনিবার (৪ মে) দুপুরে রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ এবং মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ চাল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
এসময় মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মৎস্য খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে একটা বড় ভূমিকা রাখার প্রকল্প আমরা গ্রহণ করব; আপনাদের সেই কথা দিতে চাই। এখানকার ফিশিং ল্যান্ডিংটা (অবতরণ ঘাট) প্রায় অকেজো। এখানে আধুনিক একটা ফিশিং ল্যান্ডিং তৈরির উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করব।’
পরিসংখ্যানগত ভাবে কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়লেও কার্প জাতীয় মাছ অর্থাৎ বড় প্রজাতির মাছের উৎপাদন কমে ছোট প্রজাতির মাছের আধিক্য বেড়ে চলেছে হ্রদে। প্রতি বছর কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধকালীন সময়ে হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে পোনা ছাড়া হলেও এর ‘কাঙ্ক্ষিত সাফল্য’ দেখছেন না মৎস্য গবেষক ও ব্যবসায়ীরা।
বিএফডিসির হিসাবেই কাপ্তাই হ্রদে উৎপাদিত মাছের ৯০-৯৫ শতাংশই ছোট প্রজাতির। রাঙামাটিতে পোনা অবমুক্তকরণে কর্মসূচিতে এসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানের বক্তব্যেও এই হতাশার খবর শোনা গেল।
এদিন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত আইজি আবদুল আলীম মাহমুদ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. জুলফিকার আলী, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ প্রমুখ।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা উদয়ন বড়ুয়া। আলোচনা সভা শেষে কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করেন মৎস্য মন্ত্রীসহ অন্যান্যরা অতিথিরা।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ‘চলতি মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে ৫৫ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উদ্বোধনী দিনে এক মেট্রিক টন পোনা ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদ নির্ভর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির দশ উপজেলার ২৬ হাজার ৮৬৬ জন জেলেকে ভিজিএফ খাদ্যশস্য হিসেবে ২০ কেজি করে তিন মাস চাল সহায়তা করা হবে। তবে এবছর আমরা ভিজিএফ চাল বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। মন্ত্রণালয় বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছে।’