প্রান্ত রনি, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
রাঙামাটি: আগামী ১ জুন বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা। আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা আগেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বাজেট নিয়ে আলোচনার খোরাক জমেছে। দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন মোকামে চলছে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়া-কমার গুঞ্জন। অন্যদিকে, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের নাভিঃশ্বাস হয়ে ওঠেছে।
বাজেট নিয়ে চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার কথা জানালেন পাহাড়ের কৃষি উদ্যোক্তা, তরুণ উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী নেতা, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তবে মূলত পাহাড়ের মানুষের কথায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূলহ্রাস, শিক্ষা, কৃষি, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাক্ষেত্রে আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি ওঠে এসেছে।
কৃষি উদ্যোক্তা সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার রাখা উচিত কৃষি খাতে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। ঝড়-বৃষ্টি রোদে কাজ করে ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন এ দেশের কৃষকরা। তাই কৃষিখাতে ভুর্তুকি বেশি দেওয়া উচিত যাতে কৃষকরা লোকসানে না পড়েন। আমি একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে আগামী বাজেটে কৃষিতে আগের চেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখার জন্য মামনীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, করোনা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর দেশ হওয়ায় করোনাকালীন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ কৃষির কারণে অর্থনীতিভাবে সংকটে ছিল না। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ করোকালীন অর্থনৈতিক সংকটে সম্মুখীন ছিল। বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ হওয়ায় তা থেকে অনেকটা মুক্ত ছিল। তাই আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি কৃষিখাতে বরাদ্দ রাখা উচিত।
আরও পড়ুন: শিক্ষাখাতে উন্নয়ন ও গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ চান রাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
খাবারের দোকান সুনজুক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী সুশীল বিকাশ চাকমা বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে দিন দিন। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ সংসারে চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর প্রভাবে পড়েছে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ব্যবসাতেও। আগের চেয়ে গ্রাহক-ভোক্তার সংখ্যা কমেছে। বেচাকেনা কমে যাওয়ায় আমাদেরও কর্মচারীদের বেতন-ভাত প্রদানে সংকটে পড়তে হচ্ছে। আমরা চাই আগামী বাজেটে সবার আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন কনজিউমার প্রোডাক্ট, মসলা, তেল ইত্যাদি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
তরুন সংগঠক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রে বসে নয় স্থানীয় পর্যায়ের মানুষের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই বাজেট করা প্রয়োজন। সরাসরি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়া এবং উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারজাকরণের ব্যবস্থা করা জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। সরাকরি বরাদ্দের শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। রাঙামাটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করে একটি মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন বাজেটে দেখা যেতে হবে। ভৌগলিক দুর্গমতাকে মাথায় রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ দিয়ে তার যথাযথ ব্যবহারের তাগিদ দেন এই সংগঠক।
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ শিজক ডটকমকে বলেন, আমি অবশ্যই চাইব জনবান্ধব বাজেট। পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে যদি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখতে চাই, সেক্ষেত্রে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষাখাতে অন্যান্য জেলার চেয়ে এখানে বাজেটের প্রতিফলন প্রয়োজন অধিকতর বেশি। ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি। চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙামাটির বেতবুনিয়া পর্যন্ত মহাসড়কটি ফোরলেনের যে কাজ শুরু হয়েছে সেটিকে রাঙামাটি পর্যন্ত করা হলে এখানকার মানুষের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ সহজ হয়ে যাবে। তাই আগামী বাজেটে চাইব এখানকার দিকবিবেচনা করে শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নীতকরণ, স্বাস্থ্যখাতে অগ্রাধিকার রেখে পর্যটনখাতে বিশেষ বরাদ্দের জন্য।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত রাঙামাটিতে যে কোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ২ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার মতো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক নেই। যে কারণে পুঁজির অভাবে স্থানীয় পর্যটন শিল্প অগ্রসর হচ্ছে না এবং শিল্পোদ্যোক্তা গড়ে উঠছেন না। তাই ব্যবসাবান্ধব ও উৎপাদনমুখী বাজেট প্রণয়নের জন্য স্থানীয় চাহিদা সবচেয়ে বিবেচনা করা জরুরি।