শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: ভৌগোলিকতার কারণে সৌন্দর্য ও নান্দনিক একটি সড়ক রাঙামাটির আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক। পুরো সড়কের একদিকে বিস্তীর্ণ কাপ্তাই হ্রদ, আরেকদিকে রয়েছে সবুজ ঘেরা পাহাড়ের। যেন সবুজ রঙের পাহাড়, নীল জলরাশির হ্রদের ‘বুক চিরে’ জেগে উঠেছে ১৮ কিলোমিটারের মুগ্ধতার সড়কটি। এক লেনের সড়কটি দুই লেনে উন্নীত করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
দুই লেনের সড়কে উন্নীত করায় সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন-নান্দনিকতায় এটি রূপ নিয়েছে নতুন মাত্রায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে চ্যাম্পিয়ন পুরষ্কার অর্জন করল প্রকল্পটি। এলজিইডির প্রকৌশলীরা বলছেন, এটি পুরো ডিপার্টমেন্টের জন্যই সাফল্য বয়ে এনেছে।
প্রকল্পটির ম্যানেজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন পুরষ্কার অর্জন করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙামাটি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি। ২৫ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার গুলশানের ক্রাউন প্লাজায় এক অনুষ্ঠানে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেনের কাছে পুরষ্কারটি তুলে দেন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (পিএমআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টার প্রেসিডেন্ট অন্বেষা আহমেদ।
পুরষ্কার গ্রহনের সময় এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুর হোসেন হাওলাদার, রাঙামাটি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি, রাঙামাটি অফিসের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী যুগল কৃষ্ণ মণ্ডল, সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (পিএমআই) বাংলাদেশ চ্যাপ্টার প্রতি বছরই দেশের ভৌত অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, জনবান্ধব ও সামাজিক দায়বান্ধব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরষ্কৃত করে থাকে। এবারের ২০২৩ সালের ‘স্যোশাল ইমপেক্ট’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে রাঙামাটির ‘আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক’। অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত প্রকল্পটির ম্যানেজার ছিলেন রাঙামাটি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি।
১৮ কিলোমিটার নান্দনিক সড়কটি সম্প্রসারণ করেছে এলজিইডি রাঙামাটি সদর উপজেলা দপ্তর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী শিজক ডটকমকে জানিয়েছেন, ‘সামাজিক ইমপেক্টের ওপর এবারে আমাদের আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক প্রকল্পটি চ্যাম্পিয়ান অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এবারের বাংলাদেশ প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে দেশের ৪৪টি প্রতিষ্ঠান ও দপ্তর আবেদন করেছে; এরমধ্যে আমাদের প্রকল্পটি চ্যাম্পিয়ান অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের। পুরো ডিপার্টমেন্টের সাফল্য বয়ে এনেছে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (পিএমআই) একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই তাদের চ্যাপ্টার (ইউনিট) রয়েছে। সংস্থাটি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও একযোগে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা করেছি। পুরো ১৮ কিলোমিটার সড়কটি এক লেনের সড়ক থেকে দুই লেনে উন্নীত করা হয়; রয়েছে তিনটি নান্দনিক আরসিসি গার্ডার সেতুও। ৪১ কোটি টাকা প্রাক্কলিক ব্যয়ের প্রকল্পটি সম্পন্ন শেষে এলজিইডির ৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে দাবি করেন এই প্রকৌশলী।
প্রজেক্ট ম্যানেজার ও এলজিইডি রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ শফি শিজক ডটকমকে জানান, ‘রাঙামাটির মতো দুর্গম এলাকার একটি প্রকল্প আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জিতেছে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌবরের। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। পুরো কাজটি সম্পন্নে টিমের সকলেই অনবদ্য সহযোগিতা করেছেন। এই পুরষ্কার প্রাপ্তি আমাদের সকলের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
এলজিইডি রাঙামাটি সদর উপজেলা দপ্তর জানিয়েছে, ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের কারণে আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কটিরও বিভিন্নস্থানে ভাঙন ও খানাখন্দের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরবর্তী সড়কটির সংস্কার ও একলেন থেকে দুই লেনে উন্নীতের পরিকল্পনা করে এলজিইডি। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পর সম্পন্ন হয়েছে চলতি বছরের জুনে। ৪১ কোটি টাকা প্রাক্কলিক ব্যয়ের প্রকল্পের কাজ শেষে ৩ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৮ কিলোমিটার দুই লেনের দীর্ঘ সড়কে ১২০, ৯৬ ও ৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে তিন নান্দনিক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়দের ভ্রমনের জন্য পছন্দের শীর্ষে থাকে আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক। সাম্প্রতিক সময়ে দুই লেনে উন্নীত করার পর যানবাহন চলাচলে সড়ক আরও নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। আগের থেকে সড়ক চওড়া হওয়ায় বেড়েছে সৌন্দর্য। সাম্প্রতিক কয়েকবছরে রাঙামাটি সদরে বেশ কটেজ-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে তার ৮০ শতাংশই সড়কটি ঘিরে। অবশ্য এই সড়ক নিয়ে আরও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে এলজিইডি।