সোহানুর রহমান, লোকাল করেসপন্ডেন্ট
দীঘিনালা: আগামীকাল (১৭ জুলাই) সোমবার খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার বাবুছড়া ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হেতে যাচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা এই ইউনিয়ন পরিষদের ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিবেন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নে দুটি ভোটকেন্দ্র দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। তার মধ্যে সীমান্তবর্তী নাড়াইছড়ি ভোটকেন্দ্রে যেতে ব্যবহার করতে হয় হেলিকপ্টার। আজ রোববার সকালে হেলিকপ্টার যোগে নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলোতে সড়ক যোগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৩৯০ জন, এরমধ্যে নারী ভোটার ৫ হাজার ৯৭০ জন, পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৪২০ জন ও নতুন ভোটার ১ হাজার ৯২৯ জন।
এদিকে, রোববার সকাল ১০টায় দীঘিনালা থানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে ব্রিফিং করেন খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহমুদা বেগম। ব্রিফিংয়ে মাহামুদা বলেন, ‘এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ ভূমিকার ওপর সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান বহুলাংশে নির্ভর করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে, অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আসন্ন বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে।’
এসময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তৌফিকুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রামগড় সার্কেল) নাজিম উদ্দিন ও দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, নানান দিক বিবেচনায় কিছু কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত গুরুত্বপূর্ণ বলতে এখানে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনকে ঘিরে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন, আনসার সদস্যরা কেন্দ্রের বাহিরে টহল ও অবস্থান থাকবে। এছাড়া কেন্দ্রের ভিতরে পুলিশ ও ভিডিপি সদস্যরাও নিরাপত্তায় কাজ করবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) প্রার্থীসহ বাকি ৫ জন সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। এছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৩০ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১০ জন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহেনসা লতিফুল খায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তাঁরা যেন সর্বোচ্চ সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাগত মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন।’
ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসুন। আমি আশা করি, আগামীকাল সকল ভোটারগণ নিশ্চিন্তে, নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবেন এবং তাঁদের নিরাপত্তার জন্য সর্বাত্মক কাজ করা হয়েছে।’
বাবুছড়া ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে ৫টি মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়া বাকি ৩টি নির্বাচনি ওয়ার্ড দুর্গম হওয়ায় সেখানে থাকবে বিজিবি’র অতিরিক্ত নজরদারি।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, ‘এ নির্বাচনকে ঘিরে কোথাও যাতে অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বায়িত্ব পালন করবেন।’