মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

পাহাড়ে বাঁশ ‘কারবারে’ ভাটা, ব্যবসা বদলেছেন অনেকে

অর্ণব মল্লিক, লোকাল করেসপনডেন্ট
কাপ্তাই: বাঁশ ব্যবসায়ের সঙ্গে অর্ধশত বছর ধরে জড়িত আছেন কাপ্তাইয়ের গোলাম মোস্তফা। ব্যবসায়ের সুদিন পার হয়ে এখন দুর্দিন চলছে তাঁর। আপেক্ষের সুরে মোস্তফা বলেন, ‘আগে কাপ্তাইয়ে বাঁশ ব্যবসা করে সুদিন পার করলেও বর্তমানে এই ব্যবসায় দুর্দিন চলছে। আগের মতো বাঁশ বিক্রয় কিংবা আয় রোজগার নেই বললেই চলে। কাপ্তাইয়ে বাঁশের ব্যবসা সেই ১৯৭১ সালের যুদ্ধের আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ওইসময় পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা এসব বাঁশ কেনাবেচার জন্য একটা ধুম লেগে থাকত। তখন বাঁশের সরবরাহের সঙ্গে চাহিদাও ছিল। কাপ্তাইয়ে নির্মিত দেশের অন্যতম কর্ণফুলী পেপার মিলস প্রতিষ্ঠার পর কাপ্তাইয়ে বাঁশ ব্যবসা অনেক সোনালী সময় পার করছিলাম। তখন বাঁশ, গাছ দিয়ে কাগজ তৈরি করতো প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া আমি নিজেও বেশ কয়েকবছর যাবৎ কর্ণফুলী পেপার মিলসে বাঁশ সরবারহ করেছি। তবে বর্তমানে কর্ণফুলী পেপার মিলসে কাগজ তৈরি করতে আর বাঁশ কিংবা গাছের প্রয়োজন হয় না। যার ফলে বাঁশ ব্যবসা ও সরবারহের একটা বিশাল অংশ অনেকটা থেমে গেছে।’

কথাগুলো গোলাম মোস্তফার হলেও এটি এখন পাহাড়ের বাঁশ ব্যবসার চিত্র। আগের সেই সুদিন এখন আর নেই। সোনালী দিন ফেলে এখন এই ব্যবসায় অনেকেই টিকে থাকলেও খুব ভালো নেই, কেউ কেউ বদলেছেন ব্যবসাও। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, মারিশ্যা, কাচালংসহ বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ছোট, বড়, মাঝারি আকারের বাঁশ কাপ্তাই হ্রদ হয়ে সরাসরি নিয়ে আসা হতো কাপ্তাই উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র জেটিঘাটে। যেখানে প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার এসব বাঁশের কেনাবেচা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পাইকার ব্যবসায়ীরা এসব বাঁশ কিনে থাকেন। আবার বাঁশগুলো পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে একসময় কাপ্তাই হতে এসব বাঁশ ভালো বিক্রয় হলেও কিংবা চাহিদা থাকলেও বর্তমানে মন্দা সময় যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এখন বাঁশের সরবারহ থাকলেও চাহিদা অনেক কমে গেছে।

বাঁশ কারবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ীর ভাষ্য, বর্তমানে বাঁশ বিক্রয় কমে যাওয়ার ফলে অনেকেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এক সময় প্রতিদিন বাঁশ বিক্রয় করা হলেও বর্তমানে কেবল মাঝেমধ্যে বাঁশ বিক্রয় হয়ে থাকে।

এদিকে, কাপ্তাইয়ে বাঁশ পরিবহনে জড়িত মো. আলী আকবর, ইস্কান্দার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, দীর্ঘ বছর ধরে তারা এসব বাঁশ গাড়িতে উঠানামার কাজ করে আসছেন। দৈনিক মাত্র ৩শ’ টাকা মজুরিতে তারা এই কাজ করছেন। আগে প্রতিদিন বাঁশ উঠানামার কাজ থাকলেও বর্তমানে সব সময় থাকে না, মাঝেমাঝে কাজ আসে। যেইদিন বাঁশ পরিবহনের কাজ থাকে না সেদিন অন্য জায়গায় গিয়ে কাজ করেন। এভাবেই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম।

কাপ্তাই থেকে রাজধানী ঢাকা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশ পৌঁছান ট্রাকচালক মো. শুক্কুর। ১৫ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত আছেন জানিয়ে শুক্কুর বলেন, একসময় বাঁশ পরিবহন ব্যবসায় ভালো আয় রোজগার হত। তবে বর্তমানে বাঁশ বিক্রয় যেমন কমেছে তেমনি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন ব্যয় অনেকটা বেড়ে গেছে। আরও জানান, একটি ট্রাকে প্রায় ১২শ’ ছোট-বড় বাঁশ পরিবহন করা যায়। প্রতি ট্রাকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার বাঁশ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর