মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

বনের কাঠ পুড়ছে তামাক চুল্লিতে

সোহানুর রহমান, লোকাল করেসপনডেন্ট
দীঘিনালা: খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় তামাকচুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। এসব কাঠ সরবরাহ করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের বাগান থেকে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাঁচ শতাধিক চুল্লিতে তামাক পাতা পোড়ানো হয়। এসব চুল্লি নির্মিত হয়েছে বাড়ির আঙিনা ও ফসলি জমির পাশেই।

তামাক চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুল্লিগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।প্রতি চুল্লিতে দিনে কমপক্ষে ২০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। সেই হিসাবে পাঁচ শতাধিক চুল্লিতে প্রতিদিন ১০ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিটি চুল্লিতে গড়ে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়া তামাক ক্ষেত থেকে পাতা তোলা ও সাজানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক। শ্রমিক সংকটের কারণে এখন নারী- শিশুরাও তামাকচুল্লির কাজে জড়িত হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্র জানিয়েছে, দীঘিনালা উপজেলায় এবছর ৯৬৩ একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। উপজেলার মেরুং-লংগদু সড়কের দুইপাশসহ গুলছড়ি, হাজাছড়া, বাঁচামেরুং, ছোট মেরুং ও কবাখালীর হাসিনসনপুর, মুসলিমপাড়াসহ দীঘিনালা ও বাবুছড়া ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় তামাক চাষ করা হয়। এছাড়া নদী ও শাখা খালের ৫০ ফুটের মধ্যে তামাক চাষে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে নদীর দু’পাড়ে তামাক চাষ করা হয়েছে।

চাষীরা জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে তামাক ক্ষেত থেকে পাতা তোলা শুরু হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে পাতা শুকানোর কাজ। প্রতি মৌসুমে ১ একর ক্ষেতের তামাক পাতা শুকাতে ৩০০ মণ কাঠ প্রয়োজন হয়ে থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাইনী নদীর দুইধারে করা হয়েছে তামাক চাষ। এছাড়াও মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নে তামাক চাষ হয়েছে। ওই সব এলাকায় বাড়ির আঙিনা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে তামাক চুল্লি স্থাপন করে দিন-রাত পাতা শুকানোর কাজ চলছে।

কবাখালী হাচিনসনপুর এলাকার চাষী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আড়াই একর জমিতে তামাক চাষ করেছি। একাই একটি তামাক চুল্লিতে পাতা পোড়াচ্ছি।’ চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাঠ কিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাঁরা কোথা থেকে আনছেন, আমি জানি না।’

প্রতি মণ কাঠ বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায়, প্রতিদিন তামাক চুল্লিতে ২০ মণের অধিক কাঠের প্রয়োজন হয়। রাবার, জাম, কাঁঠালসহ নানান জাতের এসব কাঠ অবৈধভাবে কেটে ওজন করে বিক্রি করা হয়।

১০ বছর ধরে তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত মধ্যবেতছড়ি এলাকার মো. বাদশা মিয়া বলেন, ‘এবছর ২ একর জায়গায় তামাক করেছি। ওজন করে কাঠ কিনে চুল্লিতে পোড়ানো হয়। এরপর তামাক পাতা বিক্রয়ের উপযোগী হয়। কাজের সুবিধার্থে বাড়ির পাশেই তামাক চুল্লি বসানো হয়েছে।’

দীঘিনালা পরিবেশ আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘তামাক চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর কারণে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সংরক্ষিত বন ও সামাজিক বনায়ন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বন ধ্বংস হতে থাকলে পাহাড়ি এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর তামাক চাষ করা হচ্ছে। আমরা তামাকচাষিদের নিরুৎসাহিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু চাষিরা বাড়তি সুযোগ ও লাভের আশায় চাষ বন্ধ করছেন না। এখানে বন বিভাগ ও প্রশাসন তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রতিটি চুল্লিতে মোটা দাগে বনের কাঠ পুড়ানো হয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন বিভাগের মেরুং রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইয়াহিয়া বলেন, ‘তামাক চুল্লিতে জ্বালানির বেশির ভাগ আসে সামাজিক বনাঞ্চল থেকে। সংরক্ষিত বন থেকে নয়।’ অবৈধ ভাবে গাছ কেঁটে তামাক চুল্লিতে পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘আমার কাছে এ ধরণের কোনো তথ্য নেই। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, ‘কোথাও যদি আইনের লঙ্ঘন হয় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর