মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তিন পার্বত্য জেলার ১৫০ পাড়াকেন্দ্র

প্রান্ত রনি, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
রাঙামাটি: তিন পার্বত্য জেলায় সপ্তাহজুড়ে অতিবৃষ্টি ও উজান ঢলে সৃষ্ট বন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত ১৫০টি পাড়াকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পাড়াকেন্দ্রের বেশিরভাগই বান্দরবান জেলার। বেশকিছু পাড়াকেন্দ্র পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। কোনো কোনোটি অতিবৃষ্টিতে নানাভাবে বিধ্বস্ত ও ক্ষতির মুখে পড়েছে। বর্তমানে পাড়াকেন্দ্রগুলো পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ নামের প্রকল্পটি ইউনিসেফের সহায়তায় তিন পার্বত্য জেলায় বাস্তবায়ন করে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটির অধীনে তিন পার্বত্য জেলায় মোট ৪ হাজার ৮০০টি পাড়াকেন্দ্র। এর মধ্যে রাঙামাটিতে ১ হাজার ৭৮৩, খাগড়াছড়িতে ১ হাজার ৭১৭ ও বান্দরবান জেলায় ১ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্র।

৪ হাজার ৮০০টি পাড়াকেন্দ্রেই পার্বত্য এলাকায় প্রান্তিক শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক পাঠদান, প্রাথমিক চিকিৎসা, কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, জনসচেতনতাসহ নানামুখী উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালিত করা হয়। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে পাহাড়ে বাল্যবিবাহ ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়েও জরিপ কাজ করেছে প্রকল্পটি। বিগত দিনে প্রান্তিক এলাকার শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক পাঠদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার ‘বাতিঘরে’ পরিণত হয়ে ওঠেছে পাড়াকেন্দ্রসমূহ।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত পাড়াকেন্দ্রের মধ্যে বান্দরবান জেলায় রয়েছে ১০৮টি। বান্দরবানের লামায় ২০, আলীকদমে ১৭, রোয়াংছড়িতে ১৫, বান্দরবান সদরে ১৯, রুমায় ১৩ থানচিতে ১৭ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৭টি। রাঙামাটি জেলায় ক্ষতি হয়েছে ৪০টির। তারমধ্যে বিলাইছছড়িতে ১১, লংগদুতে ১০, কাপ্তাইয়ে ৭, রাঙামাটি সদরে ৫, বরকলে ৩, বাঘাইছড়িতে ৩ ও রাজস্থলী উপজেলায় একটি।

তবে সবচেয়ে কম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে খাগড়াছড়ি জেলায়। জেলার একমাত্র দীঘিনালা উপজেলায় কলাবাগান পাড়া ও খালকূল পাড়া নামের দুইটি পাড়াকেন্দ্র পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট পাড়াকর্মী ও মাঠ সংগঠকরা জানায়, জেলার বেশ কয়েকটি পাড়াকেন্দ্র পানিতে নিমজ্জিত ছিল। তবে বেশিরভাগ পাড়াকেন্দ্র বিধ্বস্ত ও বিভিন্নভাবে ক্ষতিতে পড়েছে। জরুরিভাবে প্রয়োজন পড়েছে সুপেয় পানি, খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ ও কিশোরীদের স্যানিটারি প্যাড সরবরাহের। অতি শিগগিরই সংস্কার ও মেরামত না করা ছাড়া পাঠদান কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে না বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রে।

মাঠ সংগকরা জানান, কিছু কিছু পাড়াকেন্দ্র সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। কিছু পাড়াকেন্দ্রের বাহিরের মাচাং, ঘরের বেড়া, চালের টিন, খুঁটি, সিলিংসহ আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। যে কারণে ওইসব পাড়াকেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। রাঙামাটি জেলার মধ্যে বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়ার বেশকয়েকটি পাড়াকেন্দ্র ভূমি ধস ও গাছ পড়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের বান্দরবানের প্রোগ্রাম অফিসার সুশীল চাকমা জানান, ‘বান্দরবানে মোট ১ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্র রয়েছে; এরমধ্যে গেল সপ্তাহের বৃষ্টি আর বন্যায় ১০৮টি মতো পাড়াকেন্দ্র ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে কতটি পাড়াকেন্দ্রে কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটির চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন এখনো করা যায়নি। সাধারণত বেশিরভাগ পাড়াকেন্দ্র ক্ষতিতে পড়ায় পাড়াকেন্দ্রের ভেতরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে আমাদের বলা আছে যদি কেন্দ্রে পাঠদানের সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে পাড়াকেন্দ্রের সভাপতি কিংবা যে কোনো সদস্যের বাসায় বিকল্প উপায়ে পাঠদানের জন্য যেন ব্যবস্থা করা হয়; যাতে শিশুদের পাঠদান ব্যাহত না হয়।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (পিএম) মোহাম্মদ এয়াছিনুল হক বলেন, গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যায় তিন পার্বত্য জেলার ১৫০টি পাড়াকেন্দ্র পানিতে নিম্মজিত ও বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাড়াকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বান্দরবানে ১০৮টি, রাঙামাটিতে ৪০ ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুইটি পাড়াকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন জেলায় ৪ হাজার ৮০০টি পাড়াকেন্দ্রের মধ্যে ক্ষতির মুখে পড়া ১৫০টি পাড়াকেন্দ্রে আপাতত শিক্ষাপ্রদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সংস্কার ও মেরামত পরবর্তীতে আবারও এসব পাড়াকেন্দ্রে পাঠদান শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক এয়াছিনুল হক।

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর