প্রান্ত রনি, শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মুছা মাতব্বরের বিরুদ্ধে ‘সিণ্ডিকেট’ রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন সদ্যঅনুমোদিত জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতারা। তাদের অভিযোগ, দীপংকর তালুকদার ও মুছা মাতব্বর সিণ্ডিকেট রাজনীতি করছে, সিণ্ডিকেট নিয়ে চলাচল করছেন। তারা (বাদ পড়ারা) দুজনের রোষানল ও প্রতিহিংসার শিকার।
সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে জেলা শহরের বনরূপায় এক রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছেন নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাদ পড়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। যাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিগত কমিটির ১৮ জন। সংবাদ সম্মেলনে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকা ২৭ জনের বিরুদ্ধেও সহযোগী সংগঠনের দ্বৈত দায়িত্বের অভিযোগ তুলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বলেন, ‘বিগত সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নির্বাচিত সভাপতি দীপংকর তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর ও প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি প্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হাজী মো. কামাল উদ্দিনসহ চারজন একসঙ্গে বসে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে ১৫ দিনের মাথায় পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করে চূড়ান্ত অনুমোদনের নির্দেশ দেন। কিন্তু নিখিল কুমার চাকমা ও হাজী কামালের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই গতবছরের ২০ ডিসেম্বর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়।’
মতিন বলেন, ‘প্রস্তাবিত কমিটিতে পূর্বেরকমিটির ১৮ জনসহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ বড়ুয়াকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগ আরও একটি কমিটি প্রেরণ করে। এতে দেখা যায়, দীপংকর তালুকদার ও মুছা মাতব্বর ব্যক্তি স্বার্থে অন্ধ হয়ে দলকে একটি সিণ্ডিকেট কমিটিতে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন উপজেলা ও সদ্য বিএনপি থেকে আগত লোকজন দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করেছে।’
মতিনের অভিযোগ, বিভিন্ন উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে থাকার পরেও ২৭ জনকে নতুন কমিটিতে আনা হয়েছে। এতে করে দলের শক্তিকে সংকুচিত করা হয়েছে। ২৭ জনকে দ্বৈত পদে না এনে দীর্ঘদিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্যদের কমিটিতে রাখা হলে দলের শক্তি অনেকগুন বৃদ্ধি হত।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি দীপংকর তালুকদার ও মুছা মাতব্বরের ‘একপেশে কমিটি’তে রদবদল এনে দীর্ঘদিনের ত্যাগীদের সংযুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ বড়ুয়া, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জমির উদ্দিন, সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, উপ-দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন সেলিম, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অমর কুমার দে, সদস্য জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাদ পড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘আমি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলাম। কিন্তু আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। দীপংকর তালুকদারের নির্দেশেই চলতে হত।’
জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘কথা ছিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কিন্তু কোনো আলোচনাই করা হয়নি। তারা কথা দিয়ে কথা রাখেননি।’
কারো প্রতিহিংসার শিকার কী-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন জানিয়েছেন, ‘আগের জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলগুলোতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। কিন্তু বিগত কাউন্সিলে দীপংকর তালুকদার ও নিখিল কুমার চাকমা সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। এ কাউন্সিলে কাউন্সিলররা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে, দুইদিকেই আস্থা রেখেছে। এর কারণেও অনেকেই বাদ পড়েছেন। দীর্ঘদিনের কর্মীদের দীপংকর-মুছা অবমূল্যায়ন করেছেন।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ মে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন দীপংকর তালুকদার ও নিখিল কুমার চাকমা। যদিও দলের ‘হাইকমান্ডের’ নির্দেশে সমঝোতায় আসেন দীপংকর-নিখিল। নিখিল সরে দাঁড়ালে ফের সভাপতি হন দীপংকর তালুকদার। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন প্রার্থী হাজী মো. মুছা মাতব্বর ও হাজী মো. কামাল উদ্দিন নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ভোটে জিতে আবারো সভাপতি হন মুছা মাতব্বর। তবে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও নিখিল কুমার চাকমা ও হাজী কামালের মিত্রসহ অনেক ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতারা বাদ পড়েছেন বলছেন নেতাকর্মীরা।