প্রান্ত রনি, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
রাঙামাটি: টানা বর্ষণ ও বন্যায় পার্বত্য দুই জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি, মাছের ঘের-পুকুর। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে ওঠেছে সড়কের ক্ষতচিহ্ন। টানা বর্ষণে রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ৫০০ কিলোমিটারের অধিক গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরমধ্যে বান্দরবানের ৩০০ কিলোমিটার এবং রাঙামাটির ২১৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে ধস ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে জরুরি মেরামত ও সুরক্ষা কাজসহ তিন পার্বত্য জেলা থেকে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এলজিইডি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি এলজিইডির অধীনে জেলার দশ উপজেলায় ৭৫৮ কিলোমিটার কার্পেটিং, এইচবিবি ও আরসিসি সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ২১৫ কিলোমিটার সড়ক ও ১২৮ মিটার সেতু ও কালভার্ট এবারের টানা বৃষ্টি ও সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে এলজিইডির প্রয়োজন প্রায় ৪৭ লাখ টাকা।
বান্দরবান জেলার সাত উপজেলায় প্রায় ৯০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক রয়েছে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে। ৯০০ কিলোমিটার সড়কের এক তৃতীয়াংশ ৩০০ কিলোমিটার সড়কে বন্যার পানিতে তীব্র ভাঙন ও ধস দেখা দিয়েছে।
এলজিইডি সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটি জেলার আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়ক, তবলছড়ি থেকে ভেদভেদী সড়ক, দেপ্পোছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক পর্যন্ত সড়ক, চাইঞোরুই বাজার-লক্ষ্মীছড়ি সড়ক, কাউখালী-ঘিলাছড়ি সড়ক, বিলাইছড়ি-শিলছড়ি সড়ক, বাঘাইছড়ি-উগলছড়ি বাজার সড়ক, বাঘাইছড়ি-করেঙ্গাতলী সড়ক, মারিশ্যা-দূরছড়ি সড়ক, চন্দ্রঘোনা-দেবতাছড়ি বাজার সড়ক, বুড়িঘাট-ঘিলাছড়ি সড়কসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, বান্দরবানে গেজমনি পাড়া-বেতছড়া সড়ক, ছাইঙ্গা-তারাছা সড়ক, মুন্নমপাড়া সড়ক, কানাপাড়া সড়ক, পলিকাপাড়া সড়ক, দোছড়ি-বাইশারী সড়ক, আলীকদম-দোছড়ি সড়ক, সূয়ালক-লামা-মাঝের পাড়া সড়ক, গোয়ালিখোলা সড়ক, হলুদিয়া-ভাগ্যকূল সড়কে ভাঙন ও ধস হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলজিইডি বান্দরবান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার জানান, বান্দরবানের সাত উপজেলার এলজিইডির অধীনে ৯০০ কিলোমিটার সড়ক হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও বন্যায় ৯০০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩০০ কিলোমিটারের মতো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামা উপজেলায়। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে পাকা ও এইচবিবি (হেরিংবোন বল্ড) সড়ক রয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে বান্দরবানের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। বরাদ্দ পেলে মেরামত কাজ শুরু হবে।
এলজিইডির প্রকৌশলীরা জানায়, বিগত কয়েকদশকের মধ্যে পাহাড়ে গ্রামীণ সড়কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এবারের বন্যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই ভেসে ওঠেছে গ্রামীণ সড়কগুলোর ক্ষতচিহ্ন। বিশেষত গ্রামীণ সড়কগুলো বন্যা ও ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ার কারণে বিভিন্ন সড়কের কার্পেটিং ও ইটের ব্লক সরে গিয়ে বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে। দ্রুত টেকসই মেরামত করা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মানুষের চলাচলের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তবে রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার প্রায় সব উপজেলায় সববেশি গ্রামীণ সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খাগড়াছড়ি জেলায় খুব বেশি বন্যার প্রভাব পড়েনি এলজিইডির দায়িত্বে থাকা গ্রামীণ সড়কে।
এলজিইডি রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটির কয়েকটি উপজেলার মধ্যে ২১৫ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের বিভিন্ন অংশে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তন্মধ্যে ২৪ কিলোমিটার সড়ক জরুরি মেরামত করতে হবে। আমরা রাঙামাটি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর তালিকা তৈরি করে সদর দপ্তরে প্রেরণ করেছি। তিন পার্বত্য জেলার তালিকা নিয়ে একটা প্রকল্প প্রণয়ণের কাজ চলমান রয়েছে। বন্যায় ও বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটির ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, নতুনভাবে কিছু নতুন সড়ক ও সেতু নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকাসহ তিন পার্বত্য জেলা থেকে ৩০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার বলেন, প্রত্যেক বছরই বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সড়কে ভাঙন ও ধস দেখা দেয়। সড়ক বিভাগ ও এলজিইডিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এসব সড়ক সাময়িকভাবে মেরামত করে থাকে। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন না হওয়ার কারণে প্রতিবছরই ধস, ভাঙন হয়। প্রতিবছরই সংস্কার কিংবা মেরামত করা হচ্ছে।
সুজন সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হলেও টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না। আমরা অনুরোধ জানাব, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় রেখে টেকসই উন্নয়ন করার জন্য। যাতে করে প্রতিবছরই সরকারি অর্থ গচ্চা দিতে না হয়।