অর্ণব মল্লিক, লোকাল করেসপন্ডেন্ট
কাপ্তাই: জেলার কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় প্রতি বছরই বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে কাপ্তাইয়ে চাষাবাদ করা ধনিয়া পাতার কদর দেশ জুড়ে। এছাড়া পাহাড়ে উৎপাদিত এই বিলাতি ধনিয়া পাতার সুগন্ধ অনেক মধুর হয়ে থাকে। আর ধনিয়া পাতাগুলো দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা হওয়াতে ফলনও খুব ভালো হয়। সবুজ এই ধনিয়া পাতার দুপাশে খাঁজকাটা থাকার ফলে দেখতে অনেক মুগ্ধ লাগে।
সম্প্রতি উপজেলার কাপ্তাই-ঘাগড়া সড়কের সাপছড়ি, দেবতাছড়ি, সাক্রাছড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, সড়কের পাশে সারি-সারি করে সাজানো হচ্ছে বিলেতি ধনিয়াপাতা। এই ধনিয়া পাতাগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষী এবং সরবরাহকারীরা। স্থানীয় বাজারসহ শহর এলাকায় এই ধনিয়া পাতার ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন চাষীরা। তাছাড়া প্রতি বছরই ধনিয়াপাতা চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) কাপ্তাই অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড়ি ও সমতল এলাকায় বিলাতি ধনিয়া পাতার ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় ধনিয়া পাতা চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। একবার বীজ বুনলে কয়েক বছর গাছ পর্যন্ত বেঁচে থাকে এই পাতা। ফলে অনায়াসে বারবার পাতা সংগ্রহ করা যায়। যার কারণে এটি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা, সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যাসহ বেশ কয়েকজন চাষী জানান, তারা পাহাড়ে বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি এটি চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। বর্তমানে তারা পাইকারিভাবে প্রতিকেজি ধনিয়া পাতা ৭০ থেকে ৮০ টাকা ধরে বিক্রি করছেন। এই ধনিয়া পাতা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া এটি সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব বলে অনেক নতুন চাষি ধনিয়া পাতা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তারা জানান।
ওয়াগ্গা সাক্রাছড়ি এলাকার সাধন তঞ্চঙ্গ্যা নামের আরেক কৃষক জানান, এই ধনিয়া পাতা পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন বাগানের নিচে এবং আনাচে-কানাচে চাষ করা সম্ভব। যার ফলে আলাদা কোনো জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া এটি চাষ করে কমবেশি সবাই সফলতা পেয়ে থাকে। ফলনও হয় বাম্পার। যার ফলে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করছে অনেক কৃষক পরিবার।
এ বিষয়ে কাপ্তাই কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাপ্পা মল্লিক জানান, কাপ্তাইয়ের তাঁর ব্লকে প্রায় ৬ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়ে থাকে এবং প্রায় প্রতিবছরই প্রতিটি এলাকায় ভালো ফলন হয়। তাছাড়া এ ধনিয়া পাতা সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও রাসায়নিক সার বিহীনভাবে উৎপাদন করায় একদিকে যেমন এর চাহিদা বেশি। অপরদিকে কাপ্তাইয়ে উৎপাদিত এই ধনিয়া পাতা স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। এতে কাপ্তাইয়ের কৃষকেরা স্বাবলম্বী হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাপ্তাই উপজেলা কর্মকর্তা মধুসূধন দে জানান, কাপ্তাইয়ের ধনিয়াপাতা এই পার্বত্য অঞ্চল ছাড়াও সারাদেশে এর অনেক সুখ্যাতি রয়েছে। আর বিশেষ করে তিন পার্বত্য জেলায় সবচেয়ে বেশি ধনিয়াপাতা চাষ হয় কাপ্তাইয়ে। পাশাপাশি কাপ্তাই হতে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে এই ধনিয়া পাতা খুব অল্প সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়। এতে কাপ্তাইয়ের প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক কৃষক যারা ধনিয়াপাতা চাষ করে তারা খুব স্বাবলম্বী ও উপকৃত হচ্ছে। আর আমরা কাপ্তাই উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সবসময় ধনিয়াপাতা চাষে স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।