প্রান্ত রনি, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
রাঙামাটি: বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) অবস্থান ১২০ নম্বরে। বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে রয়েছে ১৯ হাজার ১৫২ স্থানে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষায়িত এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দেশীয় ও বৈশ্বিক র্যাংকিংকে ‘সন্তোষজনক’ বলেই মন্তব্য করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, রাবিপ্রবি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কয়টি বিভাগ রয়েছে সব ক’টিতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। শিক্ষক, জনবল ও অবকাঠামোর সংকটের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার যুগোপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে। প্রতিষ্ঠার এক দশকেও নির্মাণ হয়নি স্থায়ী তোনো ভবন। গুনগতমান বৃদ্ধি ও অবকাঠামোসহ অন্যান্য সংকট নিরসন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং উর্ধ্বমুখী হবে।
দেশের ১৭০টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ নিয়ে এই র্যাংকিং তৈরি করেছে স্পেনের মাদ্রিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবোমেট্রিক্স। প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক জরিপ কার্যক্রমের চলতি বছরের জুলাই মাসের এডিশনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি এ তথ্য প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে শীর্ষ দশে অবস্থান নিয়েছে দুইটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তালিকায় এগিয়ে থাকা শীর্ষ দশটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ১০৫১, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ১১৯২, তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ১৪২১, চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ১৪৭৬)।
পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ২০১৮, ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৩১৮, সপ্তম অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৪৫৪, অষ্টম অবস্থানে রয়েছে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৫৭৩, নবম অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৭৩৫ এবং দশম অবস্থানে রয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) যার বৈশ্বিক র্যাংকিং ২৮২৬।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং তৈরিতে মানদণ্ড হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষণ পদ্ধতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রভাব, নতুন প্রযুুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা, সাম্প্রদায়িক সন্নিবেশ অর্থাৎ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ভূমিকা বিবেচনা করে থাকে স্পেনের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবোমেট্রিক্স।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, রাবিপ্রবির পাঁচটি বিভাগে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৮১ জন। শিক্ষক রয়েছেন ২৮ জন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। এছাড়া ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসার্চ টেকনোলজি বিভাগ নামে একটি বিভাগ থাকলেও বিভাগটিতে কোনো শিক্ষক থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাঞ্চন চাকমা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নিজেদের অবস্থান ১২০ নম্বরকে ‘সন্তোষজনক’ মন্তব্য করেছেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার। ভিসি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশীয় অবস্থান ১২০ নম্বরে জানতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম অনেক গতিশীল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরগুলো কিছুটা এখানে পিছিয়ে থাকার অনেক কারণ রয়েছে। সরকারকে আমাদের বেতন দিতে হয়, ভবন অবকাঠামো করে দিতে হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১০ বছর হলেও ভূমি অধিগ্রহণেই লেগেছে সাড়ে ৪ বছর। যে কারণে আগের ভিসি বেশি কিছু করে যেতে পারেননি।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘রাবিপ্রবি নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখন ফিরলেও পাঁচটি অস্থায়ী স্থাপনা করা হয়েছে। যেখানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো ল্যাব নেই, খেলাধুলা-প্রতিযোগিতা করার সুযোগ নেই। সারাদিন ক্লাসই করতে হচ্ছে। আমাদের এখানে সিনিয়র শিক্ষক না থাকলেও যারা আছেন তারা অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পড়ান।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও শিক্ষাবিদ নিরূপা দেওয়ান বলেন, ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিজ্ঞান একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং হিসাব করলে এটি অনেক নিচের দিকেই থাকবে এটি স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কয়টি বিভাগ চালু রয়েছে সেগুলোতেও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। জনবল সংকটও রয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো স্থায়ী অবকাঠামোও নির্মাণ হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজস্ব ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে কোনো সুবিধাই নিশ্চিত করা যায়নি।’
এসব সংকট নিরসন করা গেলে এবং অবকাঠামোগত সংকট কাটিয়ে শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং আরও উর্ধ্বমুখী হবে বলে মনে করেন তিনি।