প্রান্ত রনি, শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: সরকারিভাবে দেশের একমাত্র শূকর খামার রয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতেই। ১৯৮৪ সালে জেলা সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের মানিকছড়িতে প্রতিষ্ঠা করা ‘শূকর উন্নয়ন খামার’। খামারটিতে ২৮০টির মতো শূকর থাকলেও ৮১টি মারা গেছে আফ্রিকান ‘সোয়াইন ফিভার’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। আরও আক্রান্ত রয়েছে বহু শূকর।
বাংলাদেশে এবারই প্রথম আফ্রিকান ‘সোয়াইন ফিভার’ ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। এ ভাইরাসে মৃত্যু ঝুঁকিহার বেশি থাকায় আক্রান্ত শূকর রক্ষা নিয়ে চিন্তিত কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে শূকর পালনকারী খামারিদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষের আমিষ বা মাংস ভোজন খাদ্যাভাসের মধ্যে প্রধান খাদ্যাভাস হলো শূকরের মাংস। পাহাড়িদের যে কোনো অনুষ্ঠানে শূকর মাংসের আয়োজন থাকেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে শূকরের মাংসের চাহিদা থাকায় পাহাড়ে এর উৎপাদন বাড়াতে রাঙামাটিতে গড়ে তোলা হয় শূকর খামারটি। তবে সরকারি উদ্যোগে এটি দেশের একমাত্র শূকর খামার হলেও বাণিজ্যিকভাবে অনেকেই শূকর খামার গড়ে তুলেছেন। আফ্রিকান প্রাণঘাতি ‘সোয়াইন ফিভার’ ভাইরাসের জীবাণু রাঙামাটিতে পাওয়া যাওয়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সাধারণ খামারীদের মাঝেও।
শূকর উন্নয়ন খামারের কর্মচারীরা জানায়, গত সপ্তাহ থেকে আমাদের খামারের শূকরগুলো ক্রম্বানয়ে রোগে আক্রান্ত হয়ে আসছে। চিকিৎসকরা বিভিন্ন ওষুধ ও ইনজেকশনের ব্যবহার করে আসলেও তেমন কোনো উন্নতি দেখা দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকতে সবগুলো শূকর হয়তো মারা যাবে।
খামারটির শূকর রক্ষক ভাগ্য বিকাশ ত্রিপুরা জানান, ‘আমি এই খামারটিতে ২৮ বছর ধরে কাজ করে আসছি। এখানে শূকরের বাচ্চা উৎপাদন করে সেগুলো বিক্রয় করা হয়। আবার যেসব শূকরগুলো বয়স্ক হয় এবং বাচ্চা দেওয়ার মতো তেমন সক্ষমতা থাকে না; সেগুলো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিক্রয় করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে এখানকার শূকরগুলো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে পালন করা শূকরগুলোকে সোয়াইন ফিভার ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে বাজার থেকে শূকর ক্রয় ও শূকর পরিবহনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খামারে পালনকারী শূকরের সুস্থ পরিবেশের জন্য খামার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।
রাঙামাটি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. তুষার কান্তি চাকমা বলেন, ‘গত ১৩ নভেম্বর থেকে রাঙ্গামাটির শূকর খামারটিতে শূকরগুলোর মধ্যে রোগের উপদ্রব দেখা যায়। পরে আমরা ১৪ নভেম্বর শূকরের নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) নমুনা পাঠাই। সিভাসু কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে এটি কলেরা সদৃশ কোনো রোগ হতে পারে। এরপর আমরা আবারো নমুনা সংগ্রহ করে সেন্ট্রাল ডিজিজ ইনভেস্টিগেশন (সিডিআইএল) ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর পর তারা আজ (বুধবার) জানিয়েছে এটি আফ্রিকান ‘সোয়াইন ফিভার’ ভাইরাস।’
এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে খামারের শূকরগুলো মারা যাচ্ছে। খামারে শংকর জাতের ২৮০টি শূকর থাকলেও বুধবার পর্যন্ত ৮১টি শূকরের মৃত্যু হয়েছে। আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার আক্রান্ত শূকরের মৃত্যুহার ৮০-৯০ শতাংশ। যদি কিছু প্রাণি রিকভার করতে পারে তাহলে বেশকিছু শূকরকে আমরা বাঁচাতে পারবো। আমাদের সিডিআইএল যেভাবে গাইডলাইন দেবে সেভাবেই আমরা শূকরের রোগ সারাতে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এই আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার ভাইরাস ভারতের মণিপুর এবং ত্রিপুরা রাজ্যে মহামারী আকার ধারণ করায় ব্যাপক শূকরের মৃত্যু হয়েছিল।’