প্রান্ত রনি, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
রাঙামাটি: জেলা সদরের মানিকছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত সাড়ে ৬১ কিলোমিটার রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি সিঙ্গেল লেন থেকে ডাবল লেনে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এই সড়কে মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনা, কৃষিখাতের উন্নয়ন এবং সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাঙামাটি সদর, নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দ্রুত ও নিরাপদভাবে পৌঁছাতে পারবে। এছাড়া আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘রাঙামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে সাড়ে ৬১ কিলোমিটারের আঞ্চলিক সড়কটি সিঙ্গেল লেন থেকে ডাবল লেনে করার পরিকল্পনা করেছে সওজ। প্রকল্প প্রস্তাবনায় সাড়ে ৬১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫৩ কিলোমিটার ডাবল লেন ও মজবুত করার কথা বলা হয়েছে। তন্মধ্যে আড়াই কিলোমিটারের অধিক নিচু অংশের সড়ক পেভমেন্ট উঁচু, ৫৬ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ড্রেন এবং ১১ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক এলাকায় ২ মিটার করে বাড়তি প্রশস্ত করা হবে।
এছাড়া পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য সড়কের মধ্যবর্তী এলাকায় দুইটি ‘ভিউ পয়েন্ট’ প্রস্তাব করা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১২ ফুটের সিঙ্গেল লেনের বর্তমান সড়কটি ২৪ ফুটের ডাবল লেনের পিচঢালা সড়ক হবে। ২৪ ফুট পিচের দুই পাশে ৩ ফুট করে ইটের সলিং থাকবে; সবমিলিয়ে সড়কটি ৩০ ফুটের হতে যাচ্ছে। পুরো সড়কে ১৩টি কালভার্ট সম্প্রসারণ ও ৮৫টি কালভার্ট নতুন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি- দুই সড়ক বিভাগের যৌথ প্রকল্পটির প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলাকে বলা হয়ে থাকে পাহাড়ের আনারসের ‘রাজধানী’। তিন পার্বত্য জেলায় যে পরিমাণ মৌসুমি ফল আনারস উৎপাদন হয়ে থাকে তার সিংহভাগ উৎপাদন হয় নানিয়ারচরে। আনারস ছাড়াও কাঁঠাল, লিচু, আমসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল উৎপাদনে সুখ্যাতি রয়েছে উপজেলার। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, রাঙামাটির নানিয়ারচর ও সদর উপজেলার বেশকিছু এলাকার মৌসুমি ফল দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন হয়ে থাকে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়কটি দিয়েই। এই সড়ক ডাবল লেনে উন্নীত হলে স্থানীয় মৌসুমি ফল ও বাঁশ ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে বলে মনে করছেন তারা।
নানিয়ারচর উপজেলার বাঁশ ব্যবসায়ী আব্দুল হক জানালেন, নানিয়ারচর-মহালছড়ি এলাকার ব্যবসায়ী-কৃষকদের সারা বছরই ব্যবসায়িক মৌসুম। বছরের ১২ মাসই স্থানীয় কৃষক-ব্যবসায়ীরা মৌসুমি ফলের আবাদ, পরিবহন ও বাঁশ পরিবহন করে থাকেন। আব্দুল হকের মতে, ‘প্রতি মৌসুমের নানিয়ারচর-মহালছড়ি এলাকা থেকে ২০-৩০ হাজার মৌসুমি ফল ও বাঁশ-গাছ পরিবহনকারী ট্রাক যাতায়াত করে থাকে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক দিয়েই। সড়কটি সরু হওয়ার কারণে এসব বড় আকারের ট্রাক চলাচলে ব্যাহত হয়। সড়কটি ডাবল লেনে উন্নীত স্থানীয় কৃষি সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে উপকৃত হবেন এবং আর্থসমাজিক অবস্থার বিকাশ ঘটবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলনূর সালেহীন বলেন, সড়ক বিভাগ রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি সিঙ্গেল লেন থেকে ডাবল লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। মে মাসে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করে সড়ক ভবনে পাঠানো হয়েছে। একনেক সভায় পাস হলে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি দীর্ঘ সাড়ে ৬১ কিলোমিটার হলেও এটি সিঙ্গেল লেনের সড়ক, যে কারণে বিভিন্ন সময়ে যানবাহন ওভারটেক করতে ঝুঁকি থাকে থাকে। এই প্রকল্পটির অধীনে ৫৩ কিলোমিটার ডাবল লেন সড়ক ও ১১ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের রাস্তা অতিরিক্ত ২ মিটার প্রশস্ত এবং ড্রেন, কালভার্টসহ অন্যান্য কাজ করা হবে। এতে করে স্থানীয়দের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ও সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার জানান, ‘রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি দীর্ঘদিনের পুরনো সড়ক হলেও এখনো সিঙ্গেল লেন সড়কে রয়ে গেছে। সড়ক বিভাগের এই সড়কটি সিঙ্গেল লেন থেকে ডাবল লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। এই সড়কটি ডাবল লেন হলে যাত্রীবাহী বাস, কৃষি পণ্য ও মৌসুমি ফল পরিবহনকারী যানবাহন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। একদিকে যেমন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে, আরেকদিনে এই সড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণ আরও কমে আসার পাশাপাশি এটিকে একটি সৌন্দর্যবর্ধিত সড়কেও তৈরি করা যেতে পারে।’