মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

সন্তু লারমা’র অভিযোগ, উন্নয়নের পার্বত্য চুক্তি ‘রুদ্ধ’ হয়ে আছে

প্রান্ত রনি, শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: সকল উন্নয়নের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ‘রুদ্ধ হয়ে আছে’ বলে অভিযোগ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।

তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য পার্বত্য অঞ্চলের অস্তিত্বের যে সংকট সংস্কৃতির যে সংকট, সেই সংকটকে মোকাবিলা করার জন্য প্রতিবিধান করার জন্য আমরা ১৯৯৭ সালে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষর করেছিলাম, এখানকার মানুষের জীবনধারার সাবলীলতা-স্বাভাবিকতা নিরাপত্তাসহ সকল ধরণের উন্নয়নের যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে আজকে সেই চুক্তি কোনো না কোনোভাবে বাস্তবায়নের পথে রুদ্ধ হয়ে আছে।’

সোমবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় রাঙামাটিতে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান উৎসবের উদ্বোধনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব এ কথা বলেন। রাঙামাটি পৌরসভা চত্বরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাঙামাটি বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান-২০২৩ উদযাপন কমিটি।

অনুষ্ঠানে ‘পাহাড়ের পরিস্থতি ভালো নয়’ মন্তব্য করে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রধান নেতা সন্তু লারমা বলেন, ‘এখানে পরিস্থিতি ভালো নয়, চৈত্র মাস আসলে আমাদের মনে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা জাগে। বিজু বা চৈত্র মাসকে কেন্দ্র করে এখানকার মানুষেরা নতুন করে আশায় বুক বাধে; নতুন আশায় জীবনটাকে দেখে। আমাদের ভাবতে হবে ফেলে আসা যে বছরগুলো সে বছরের মধ্যে আমার জীবনটা কেমন ছিল। যে জীবনে আমি নতুন করে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, সে জীবন কেমন হতে পারে কেমন করে আসবে; সেটাও আমাদের অবশ্যই ভাবিত করে তুলে। পার্বত্য অঞ্চলে জুম্মজাতীয় জনজীবনে এ প্রশ্নটাই জাগা উচিত ফেলে আসা জীবনে আমি কতটুকু পাহাড়ের ফেলে আসা জীবনধারাকে স্বাভাবিক করার জন্য, জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছি নাকি পারিনি। সেটা আমাদের প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীকে ভাবা উচিত।’

পাহাড়ের কারো ‘জীবনের নিরাপত্তা নেই’ উল্লেখ করে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলের তথা এখানকার স্থায়ী অধিবাসীদের কোনো সুখ-শান্তি ছিল না। তারা নানা দুশ্চিন্তায় বিপর্যস্ত থাকতো। আজকে পার্বত্য অঞ্চলের বুকে আমাদের কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই। আমাদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু’কে আমরা পালন করছি, অথচ আমাদের অন্তরে প্রশ্ন জাগে আমার আশেপাশে আমি কি নিরাপদ? আমি মনে করি যদিও এই সময়টা অনেক আনন্দের দিন অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার দিন। এইদিনে আমরা গুনগুন করে গান গাই, মনে মনে অনেক কিছুই আমরা ভাবি, দেখি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা। কিন্তু চুক্তি সাক্ষরের পরে ২৫ বছর ধরে আমরা কোনো বছর এই আনন্দের দিন, সরলীয়া দিন উদযাপন করতে পারিনি। আজকে অনেকেই এখানে অনেকেই আসেননি, আমাকে দু-কয়েকজন ফোনে বলেছে, তারা আসা যাওয়ার পথে সমস্যায় পড়তে পারেন এজন্য আসেননি। বস্তুত আমাদের এই আনন্দের দিনটি অতীতের মতো হাসি-গানে ভরপুর করার জন্য অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। বাধা-সমস্যার কারণে চৈত্র মাসের বিজুর দিন আমাদের জীবন থেকে হারাতে বসেছি, সেটা আমরা হারাতে চাইনা।’

জেএসএস সভাপতি বলেন, “পার্বত্য চুক্তির যাতে বাস্তবায়ন না হতে পারে সেটার প্রতিফলন নানাদিক দিয়ে হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী-পাহাড়ি-জুম্ম জনগণের অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করার জন্য যে সমস্ত প্রয়াস-ষড়যন্ত্র তার একটা এই সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল; যেটা শুধু পার্বত্য অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।”

আলোচনা সভায় বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান-২০২৩ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার (অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব) সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও শিক্ষাবিদ অঞ্জুলিকা খীসা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী লেখক ফোরামের সাবেক সভাপতি শিশির চাকমা, বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওর্য়াকের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, সুজন রাঙামাটির সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ারসহ অনেকেই।

এদিন সকালে পৌরসভা চত্বরে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পরে আলোচনা সভার পূর্বে পাহাড়ি নৃত্যশিল্পীদের  পরিবেশনায় ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। আলোচনা সভা শেষে পৌরসভা চত্বর থেকে একটি র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিটি জেলা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালি পাহাড়ের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যাসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী শিশু-কিশোর, নর-নারীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে অংশগ্রহণ করেছেন।

এদিকে, উদযাপন কমিটির তিনদিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে দ্বিতীয় দিন আগামীকাল মঙ্গলবার রাঙামাটি মারী স্টেডিয়ামে বিভিন্ন খেলার আয়োজন ও শেষ দিন (বুধবার) রাজবন বিহার পূর্বঘাটে নদীতে ফুল ভাসানোর আয়োজন রয়েছে।

অতিথিরা না আসায় ‘ক্ষোভ’

এই অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে প্রধান অতিথি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমাকে উদ্বোধক, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমাকে প্রধান আলোচক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীকে সম্মানিত অতিথি করেছিল উদযাপন কমিটি। তবে প্রধান অতিথি ছাড়া সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলের তিনজনেরই (উদ্বোধক, প্রধান আলোজক ও সম্মানিত অতিথি) কেউই উপস্থিত হননি। তবে এর আগের বছর একই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবারের সম্মানিত অতিথিতে নাম থাকা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত উদ্বোধক, প্রধান আলোচক ও অতিথিদের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে সন্তু বলেন, ‘আজকে এই আলোচনা সভায় যাদের আসার কথা, যাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বলে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ মনে করে। তারা কেন আজকের এই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করতে পারলেন না? এই বিষয়টা কিন্তু আমারো বোধগম্য হয়নি। আমার মনে একটি বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ- যে কারণে পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা সমাধানের জন্য চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে, যে সমস্ত কারণে এই চুক্তির বাস্তবায়ন এগিয়ে যেতে পারছে না, সেই সূত্রধরেই কি আজকের আলোচনা সভায় যারা গুরুত্বপূর্ণ তারা আসেননি?’

উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার বলেন, ‘উদ্বোধক, প্রধান আলোচক ও সম্মানিত তারা প্রত্যেকেই অনুষ্ঠানে আসবেন বলে আমাদের আশস্ত করেছিলেন; কালকেও বলেছিরেন, কিন্তু আজকেই অনুষ্ঠানে কেউই উপস্থিত হননি। কেন তারা উপস্থিত হননি কিংবা হতে পারেননি বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর