শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে সর্প দংশন, প্রতিকার, চিকিৎসা এবং রেসকিউ ও অবমুক্তকরণ বিষয়ক দু’দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে। কর্মশালার শেষ দিনে অংশগ্রহণকারীরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন এবং সনদ বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামে এটিই প্রথমবারের মতো সর্পবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আয়োজনে বন সংরক্ষক রাঙামাটি অঞ্চল কার্যালয়ের সভাকক্ষে দুই দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। কর্মশালার প্রশিক্ষক ছিলেন বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মো. আবু সাঈদ।
প্রশিক্ষণে বন কর্মকর্তা, সাপ উদ্ধারকারী দলের প্রতিনিধি, যুব সংগঠক, বন কর্মী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীসহ ২৫ জন অংশ নেন। কর্মশালায় বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর, নির্বিষ সাপ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয় এবং কিভাবে রেসকিউ ও অবমুক্ত করা যাবে সে সম্পর্কে ধারণা নেন প্রশিক্ষণার্থীরা।
আরও পড়ুন:বছরে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ মারা যায় সাপের কামড়ে
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছালেহ মো. শোয়াইব খান এবং বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, সকালে হাতে কলমের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী কাল নাগিনী, দুধ রাজ, দাঁড়াস ও পদ্মগোখরা- এই চারটি সাপ সম্পর্কে বিশদ ধারণা নেন এবং রেসকিউ, অবমুক্ত করার পদ্ধতি ব্যবহারিকভাবে শেখেন।
বন কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সর্প বা সাপ পরিবেশ ও প্রতিবেশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ফরেস্ট ইকো-সিস্টেমের খাদ্য শৃঙ্খলেও ভূমিকা প্রাণিটি। সাপ ইঁঁদুর খাওয়ার কারণে ফসলে ইঁদুরের আক্রমণ কম হয়ে থাকে। সাপকে ভয় পাওয়ার প্রধান কারণ সাপ সম্পর্কে না জানা। সাপে কামড়ালে অজ্ঞতা আছে; ভয়ের কারণে মানুষ হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। তাই সাপ রেসকিউ করার ক্ষেত্রেও যেখানে ঝুঁকি আছে; সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই রেসকিউ করতে হবে।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছরে ৪ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে বা সর্পদংশনের শিকার হন; যার মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ সাপের দংশনের কারণেই মারা যান। এশিয়ার মধ্যে ভারতেই প্রতি বছরে ৫০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাংলাদেশে বর্তমানে ১১৭ প্রজাতির সাপ রয়েছে। তন্মধ্যে ৩৪ প্রজাতি বিষধর এবং ৮৩ প্রজাতির সাপ নির্বিষ। সাপ নিয়ে মানুষের ভীতি কমলে মারা বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে সাপে কাটা রোগীর বেশিরভাগই মারা যায় আতঙ্কে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে।