শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

২০ এপ্রিল থেকে তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ কাপ্তাই হ্রদে

প্রান্ত রনি, শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: আগামী ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রশাসন। হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তিন মাস সব ধরনের মাছ শিকার, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। এসময়ে বন্ধ থাকবে স্থানীয় পর্যায়ের বরফকলসমূহ, নিয়মিত হ্রদ টহলে থাকবে বিএফডিসির মনিটরিং টিম।

সোমবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় রাঙামাটি জেলাপ্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত এক বৈঠক থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। বৈঠকে জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, সদর ইউএনও নাজমা বিনতে আমিন, সংরক্ষিত পৌর কাউন্সিলর জোবায়তুন নাহার, রাঙামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়াসহ অন্যান্য মৎস্য ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার জেলাপ্রশাসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক

বৈঠকে জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল জেলেদেরকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের গুরুত্বপূর্র্ণ স্থানে নৌ পুলিশ মোতায়েন করা হবে। হ্রদে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন এবছর ১০ দিন আগে থেকে মাছ আহরণ বন্ধ- জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও সব নিয়মকানুন ও সিদ্ধান্ত একই রয়েছে। তবে কাপ্তাই হ্রদের পানি আশানুরূপ কমে যাওয়ায় ১০ দিন আগে থেকে মাছ আহরণ বন্ধ করা হয়েছে।’

এদিকে, পানিস্বল্পতার কারণে কাপ্তাই হ্রদে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা গত বছর পহেলা মে থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস ১৭ দিন বন্ধ করা হয়েছিল। এর আগের মৌসুমেও একই কারণে তিন মাসের নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞা এক মাস বর্ধিত করে চার মাস হয়েছিল। তবে এই দুই মৌসুমে বর্ধিত সময়ের পরও পানিস্বল্পতার মধ্য দিয়ে মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় ভাটা পড়ে বার্ষিক মৎস্য অবতরণে।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে ৭৬ দশমিক ৩৭ এমএসএল (মীনস্ সি লেভেল) পানি রয়েছে। স্বাভাবিক সময় অনুযায়ী হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৬ দশমিক ২০ এমএসএল। সে হিসাবে বর্তমানেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ এমএসএল পানিস্বল্পতা রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে।

প্রসঙ্গত, দেশের বৃহত্তম বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যে অন্যতম কাপ্তাই হ্রদের আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। ষাটের দশকে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেয়ায় বিশাল কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়। প্রতি বছরের ১ মে-৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন ও অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি নিশ্চিত করাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষে আগস্ট থেকে শুরু হয় মাছ আহরণের নতুন মৌসুম, যা শেষ হয় পরবর্তী বছরের এপ্রিলে। মূলত প্রতি মৌসুমে নয় মাসই মাছ আহরণ করা হয়ে থাকে কাপ্তাই হ্রদে।

রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত এ কাপ্তাই হ্রদে সরকারি হিসাবে প্রায় ২৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে পরিবার মাছ ধরাসহ সংশ্লিষ্ট পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ হ্রদের সৃষ্টি হলেও এটি বর্তমানে সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস।

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর