সেতু চাকমা
ইংরেজিতে Wild Blood Fruit যা বাংলায় বন্য রক্ত ফল। যদিও বাংলায় একে ‘রক্তগোলা’ বা ‘লালগোলা’ও বলা হয়। বাংলাদেশের সমতলে এই ফল পরিচিতি না এবং সেই সাথে আমার জানা মতে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ও (বারি) পরিচিত নয়। মূলতঃ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ট্রাইবাল লোকজন এই ফল সর্ম্পকে পরিচিত। ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই ফল বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) এবং ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জ্, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ে প্রাকৃতিক ভাবে বন জঙ্গলে পাওয়া যায় (Kalkame et al., 2018)। তবে কিছু কিছু মানুষ জঙ্গল থেকে চারা বা ফলের বীজ থেকে গাছ করছে।
আঞ্চলিক নাম: হিন্দিতে ‘খুন ফল’, চাকমাতে ‘রসকো’, ত্রিপুরাতে ‘থয়ফল’, গারোতে ‘তে. পত্তং’, মিজোতে ‘থেইখুং-সেন’, মারমাতে ‘রাঙ্গুইছি’, তামিল/তেলেগু/মালায়ালামতে ‘রক্তফল’ এবং খাসিয়াতে ‘সোহস্নাম’ (Kalkame et al., 2018)। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের মারমারা ‘গংখাশী’ এবং ত্রিপুরারা ‘থাইচাক’ বলে।
উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য: উদ্ভিদটি চিরসবুজ বহু বর্ষজীবি লতানো কাঠের লতা। এটি চরম বৈরি আবহাওয়ায় (খুব শুষ্ক থেকে এসিডিক মাটিতে) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে পারে (Kalkame et al., 2018)। গাছটি ১০০ মিটার বা এর থেকে আরও বেশী লম্বা হতে পারে (Rahim et al., 2015)। এর প্রচুর ডালযুক্ত ডালপালা থাকে, যা বড় গাছকে আকড়ে ধরে বেড়ে ওঠে।
ফলের স্বাদ: রক্ত ফলের অনন্য স্বাদই এটিকে এর স্থানীয় অঞ্চলে এত জনপ্রিয় করে তোলে। পাঁকা ফলের ভিতরের শাঁস লাল রক্ত বর্ণের এবং টক-মিষ্টির স্বাদ যার মাধ্যমে ফলটিকে স্বতন্ত্র গন্ধ দেয় যা ফলটি খেতে মানুষকে উপভোগ্য করে তোলে। পাঁকা ফল বাহিরের আবরণ অনাবৃত করে সরাসরি চুষে রস খাওয়া যায়। সাধারণত এপ্রিল-জুন মাসে এই ফলটি পাঁকে এবং পাওয়া যায়।
পুষ্ঠি গুণাগুণ এবং স্বাস্থ্যের উপকারিতা: ফলটিতে ডায়েটারি ফাইবারের ভালো উৎস রয়েছে এবং ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং কে রেয়েছে। ফলটিতে খনিজ উপাদানে ভরপুর প্রতি ১০০ গ্রামে-
অন্যান্য ব্যবহার: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা ও মারমা জাতিগোষ্ঠী উদ্ভিদের কচি অঙ্কুর জন্ডিস রোগ নিরাময় কাজে ব্যবহার করে থাকে (Kalkame et al., 2018)। এর ফল ও বীজ রক্তসল্পতা নিরাময় কাজে এবং মূলের মণ্ড চুলকানি থেকে উপশম পেতে সাহায্য করে থাকে (Rahim et al., 2015)। এছাড়াও পাঁকা ফলের রং হস্তশিল্প পণ্যে রঞ্জক হিসেবে ব্যবহার করা হয় ত্রিপুরায় ।
মূল কথা এই উদ্ভিদের গুণাগুণ অনেক যদি গবেষণা এবং ভালো পৃষ্ঠপোষকতায় Wild Blood Fruit বা বন্য রক্ত ফল অপার সম্ভাবনা রয়েছে পুষ্ঠি ও শিল্পায়ণে।
লেখক: সহকারী রেজিস্ট্রার, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়