প্রান্ত রনি, শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে পোনা ছাড়ল বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বেলা ১২টার দিকে প্রধান অতিথি হিসাবে হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার।
হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্ত ছাড়াও মৎস্যজীবীদের মাঝে ভিজিএফ (খাদ্যশস্য) বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১টায় কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিতরণ কেন্দ্রের পন্টুনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
আলোচনা সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন বিএফডিসির চেয়ারম্যান কাজী আশরাফ উদ্দীন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, নৌ-পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার, আ ফ ম নিজাম উদ্দিন, রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) শাহনেওয়াজ রাজু।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মৎস্য ব্যবসায়ী উদয়ন বড়ুয়া ও মৎস্যজীবী শহর আলী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে বেলা ১২টায় অন্যান্য অতিথিরাসহ হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্ত ও জেলেদের খাদ্যশস্য বিতরণ করেন প্রধান অতিথি।
এসময় প্রধান অতিথি দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘মাছ ধরার বন্ধ সময়ে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরলে আপনারা (জেলে) পরের মৌসুমে মাছ পাবেন না। নিজেদের জীবিকার জন্য হলেও এই তিন মাস মাছ ধরা থেকে বিরত থাকুন। সরকার আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে; আপনারা যদি সহায়তা না করেন তাহলে সেটি আপনাদের জন্য মঙ্গলজনক হয়ে উঠবে না। আগামীকাল বছর থেকে খাদ্যশস্য বরাদ্দ আরো বাড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক মৎস্য গবেষক ড. ইয়াহিদা মাহমুদ বলেন, ২০৪১ সালে আমাদের মাছ উৎপাদনের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ৯০ লাখ মেট্রিক টন; এখন উৎপাদন হচ্ছে ৪৭ লাখ মেট্রিক টন। যা অর্ধেক। কাপ্তাই হ্রদ খুব উৎপাদনশীল হ্রদ। এখানে পানির মান অনেক ভালো। তবে হ্রদে ছোট মাছ বেশি; এরমধ্যে কাচকি-চাপিলা মাছই ২৮ শতাংশ। তাই ছোট মাছ ধরলেও সেগুলা বড় হওয়ার জন্য ছেড়ে দিতে মৎস্যজীবীদের অনুরোধ জানিয়েছেন এই গবেষক।
মৎস্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী, রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা মিলে কাপ্তাই হ্রদ নির্ভরশীল নিবন্ধিত জেলে সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। তবে এর আগের বছর সাড়ে ২৫ থাকলেও এবছর আরও এক হাজার বেড়েছে। বিএফডিসি সূত্র জানিয়েছে, এই মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে ৬০ মেট্রিক টন কার্পজাতীয় মাছের পোনা ছাড়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বিএফডিসির।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন ও সুষম বৃদ্ধির লক্ষ্যে হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় স্থানীয় প্রশাসন। তবে হ্রদে পানিস্বল্পতার কারণে এবছর নির্ধারিত সময়ের ১১ দিন আগে অর্থাৎ ২০ এপ্রিল থেকেই মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।