শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

৫ সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিপাকে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগ

শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: দেশের বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণ এবং অধিকাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাও। বর্তমান তারল্য সংকটের কারণে বিপিডিবির উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে তৎপর হয়েছে সংস্থাটি। বিপিডিবি রাঙামাটি বিতরণ বিভাগের অধীন জেলার পাঁচটি সরকারি সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫২ লাখ ১১ হাজার টাকা। এর মধ্যে এক প্রতিষ্ঠানেরই প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য বলা হলেও কেউ টাকা পরিশোধ না করায় বিপাকে পড়েছে বিপিডিবি।

বিপিডিবি রাঙামাটি বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাঙামাটি কার্যালয়ের অধীনে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য ১১টি গ্রাহক হিসাব রয়েছে। এসব হিসাবের বিপরীতে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বকেয়া বিল দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর পাঠানো এক চিঠিতে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। চিঠিতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের মোট বিলকৃত টাকা থেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২২ লাখ ১৬ হাজার টাকা কম পরিশোধ করেছে। ফলে বকেয়া ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে অন্যথায় সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ব্যতীত কোনো গত্যন্তর থাকবে না বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়।

বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডেরও। উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ১২টি গ্রাহক হিসাবের বিপরীতে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি উন্নয়ন বোর্ড। সর্বশেষ দেয়া তাগাদাপত্রে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বলা হয়েছিল। তা না হলে নির্ধারিত সময়ের পরে আর কোনো নোটিস না দিয়েই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানায় বিপিডিবি।

এছাড়া পুলিশ সুপার রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের অধীনে ১৭টি গ্রাহক হিসাবের বিপরীতে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সর্বমোট ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর দেয়া তাগিদপত্রে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বলা হয়েছিল।

রাঙামাটি পৌরসভার অধীনে ছয়টি হিসাবের বিপরীতে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সর্বমোট বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ৪৬ লাখ ৫ হাজার টাকা। বিপিডিবি রাঙামাটি পৌরসভাকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য অনুরোধ করেছিল। নির্ধারিত সময়ের পরে আর কোনো নোটিস না দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।

বকেয়া রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ রাঙামাটি কার্যালয়েরও। এ সংস্থার আওতাধীন সাতটি হিসাবের মধ্যে চারটির বিপরীতে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। কিন্তু সওজকে দুই দফায় তাগাদা দিয়েও বকেয়া টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে বিপিডিবি রাঙামাটি বিতরণ বিভাগ। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর পাঠানো ওই চিঠিতে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায় বিপিডিবি।

বিপিডিবি রাঙামাটি কার্যালয়ের তথ্য বলছে, সম্প্রতি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দ্রুত আদায়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে সংযোগ বিচ্ছিন্নের নির্দেশনাও দেন তিনি। সংস্থাটি তারল্য সংকটে থাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সরকারি রাজস্ব আদায়ের তাগিদও দেন তিনি।

বিপিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে গ্রাহক হিসাব রয়েছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের বকেয়া রয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগই সরকারি। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সময়মতো বকেয়া বিদ্যুৎ আদায় করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। কয়েক দফায় চিঠি দিয়ে তাগাদা দিলেও তাতে কান দেয়নি প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্নের কথা বললেও বিদ্যুৎ সঞ্চালন বহাল রয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) রাঙামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান শিজক ডটকমকে বলেন, ‘গ্রাহক পর্যায়ে আমাদের ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাব রয়েছে। রাঙামাটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের জুনের মধ্যে কিছু বকেয়া টাকা আদায় হবে।’

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর