শিজক রিপোর্ট
রাঙামিাটি: পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় সেচ ব্যবস্থাপনার সংকট নিরসন ও কৃষি উন্নয়নে সেচ ড্রেন নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটির প্রথম অর্থবছরের আটমাস কেটে গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অর্থছাড় পায়নি উন্নয়ন বোর্ড। ৪৯ কোটি টাকা বাজেটের প্রকল্পটির প্রথম অর্থবছরে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও অর্থছাড় না হওয়ায় প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি শূন্য। তবে বোর্ড কর্মকর্তারা অর্থছাড়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রকল্পের পিডিকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ‘রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে সেচ অবকাঠামো নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্যোগ নেয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত তিন অর্থবছর মেয়াদি প্রকল্পটির বরাদ্দ ধরা হয় ৪৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর থেকে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হলেও বরাদ্দকৃত অর্থছাড় না হওয়ায় কোনো অগ্রগতি নেই।
বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটিতে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে মাসিক উন্নয়ন পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহ আলোচনা ও বেশকিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে ‘রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে সেচ অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পের পরিচালক জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো অর্থছাড় করা হয়নি। যে কারণে প্রকল্পের ভৌত ও আর্থিক কাজের কোনো অগ্রগ্রতি নেই। বৈঠকে বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ অনুযায়ী অর্থছাড় প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা দেন। তবে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে নারাজ প্রকল্প পরিচালক।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেচ ব্যবস্থাপনার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাঙামাটি জেলায় কৃষিক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থাপনার সংকট অনেকটা কেটে যাবে। তবে অনুমোদনের পরও অর্থছাড়ের অভাবে প্রকল্প কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় তিন বছরের প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রথম অর্থবছরের আটমাসে যেহেতু কোনো অগ্রগতি নেই, সেক্ষেত্রে প্রকল্প মেয়াদ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, সেচ অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প যখন হাতে নেয়া হয়েছে সে সময় থেকে বর্তমান সময়ে নির্মাণ-সামগ্রীর (কাঁচামাল) মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়তে পারে। যদি ব্যয় না বাড়ে এবং নির্মাণ সামগ্রীর বাজারমূল্য নিম্নমুখী না হয় সেক্ষেত্রে সেচ অবকাঠামো নির্মাণ মান নিয়ে অসঙ্গতি দেখা দিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা শিজক ডটকমকে বলেন, ‘রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় সেচ অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে ৪৯ কোটি টাকার যে প্রকল্পটি রয়েছে সেটি চলতি অর্থবছরে এক কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড়া না হওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।’
চলতি অর্থবছরে অর্থছাড় হতে পারে কী-না প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবার হবে মনে হচ্ছে না, তবে আগামী দুই অর্থবছরে আশাকরি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে প্রকল্প মেয়াদ বাড়তে পারে। বিস্তারিত তথ্য বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানাতে পারবেন।’
এদিকে, উন্নয়ন বোর্ড সদস্য (অর্থ) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ শিজক ডটকমকে জানান, ‘প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও প্রথমে শূন্য বরাদ্দ ছিল। পরে এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আমার কাছে হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে। প্রকল্পের মোট বাজেট ৪৯ কোটি টাকা হতে পারে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বিস্তারিত জানাতে পারেন।’
তবে প্রকল্প সর্ম্পকে জানতে চাইলে বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তুষিত চাকমা কোনো তথ্য দিতে চাননি। তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে আমার পক্ষে কোনো তথ্য দেয়া সম্ভব নয়। চেয়ারম্যানকে দিয়ে আমাকে প্রেশার দেয়া তো ঠিক না, আমি বিষয়টি মাইন্ড করলাম। কোন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ কত, অবশ্যই বোর্ড চেয়ারম্যান তা জানেন।’
অর্থছাড় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম শিজক ডটকমকে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি জেলায় অর্থ ছাড় না হওয়ায় কোনো প্রকল্প কার্যক্রম চালু হয়নি এমন তথ্য তো আমার জানা নেই। তবুও বিষয়টি আমি দেখব।’