মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

পাহাড়ের ফুল ঝাড়ুর কদর দেশজুড়ে

অর্ণব মল্লিক, লোকাল করেসপনডেন্ট
কাপ্তাই: উপজেলার অর্থনীতির কেন্দ্র বিন্দু হিসেবেই পরিচিত কাপ্তাইয়ের জেটিঘাট। এই জেটিঘাটেই পাশ্ববর্তী উপজেলা বিলাইছড়ি, জুরাছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌ-পথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে আসে ফুল ঝাড়ু। নৌকা থেকে এসব ফুল ঝাড়ু সারি সারি করে উঠানো হয় জেটিঘাটের অপেক্ষারত ট্রাকে। পাহাড়ের উৎপাদিত এসব ফুলের ঝাড়ুর কদর রয়েছে দেশজুড়ে। এসব ফুলের ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

ফুলের ঝাড়ু পরিবহনে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কাজ করছে স্থানীয় শ্রমিক হাশেম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরই তিনি এই মৌসুমে ফুলের ঝাড়ু পরিবহনে কাজ করে আসছে। দৈনিক ৫ শ’ টাকা মজুরিতে পাইকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ফুলের ঝাড়ু ট্রাকে উঠানোর কাজে সহযোগিতা করেন। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই তিনি কাজ করছেন; তবে সপ্তাহের শনিবার সাপ্তাহিক হাটে ব্যস্ততা একটু বেশি থাকে। ওইসময় তিনি ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ঝাড়ু সরবরাহ কাজে সময় দিয়ে থাকেন। ওইসময় বাড়তি আয় হয় তাঁর। এ রকম স্থানীয় বেশ কয়েকজন শ্রমিক প্রায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ঝাড়ু সরবারহ করার কাজ করে সংসার চালান বলে জানান হাশেম।

অপেক্ষাকৃত ট্রাকে ফুল ঝাড়ু তুলছেন শ্রমিকরা। ছবি: অর্ণব মল্লিক

এদিকে, ফুল ঝাড়ু বিক্রয় করতে কাপ্তাই জেটিঘাটে আসা বিলাইছড়ির ফারুয়ার বাসিন্দা সুইসাপ্রু মারমাসহ কয়েকজন জানায়, পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে ফোটা এই ফুলের ১০ থেকে ১৫টি দিয়ে আঁটি বেঁধে ঝাড়ু বানানো হয়। সেই ঝাড়ু স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ টাকায়। বেশ কয়েকবছর ধরে তারা এই ফুল ঝাড়ু বিক্রয় করে লাখ লাখ টাকা আয় করে আসছেন।

চট্টগ্রাম শহরের বহাদ্দারহাটের পাইকার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম; কাপ্তাইয়ের জেটিঘাটে ফুল ঝাড়ু কিনতে এসেছেন তিনি। মনিরুল জানান, পাহাড়ের ফুল ঝাড়ুর কদরের কথা শুনে তিনিও বেশ কয়েকবছর ধরে কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে ঝাড়ু ক্রয় করে আসছেন। প্রতি ট্রাকে প্রায় ৩ হাজার বান্ডেল ফুল ঝাড়ু পরিবহন করা যায়। এছাড়া প্রতি বান্ডেল ১-২ হাজার টাকা ক্রয় করে থাকেন। পাশাপাশি সেগুলো শহরে নিয়ে খুচরা বাজারে বিক্রয় করে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা আয় হয় মনিরুলের।

কাপ্তাইয়ে ফুল ঝাড়ু কিনতে আসা ফেনীর বাসিন্দা মো. আরমান জানান, পাহাড়ের এসব ফুল ঝাড়ু ক্রয় করে যেভাবে লাভবান হওয়া যায়, সেটা দেশের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় কম। কেন না কাপ্তাই থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে এই পাহাড়ি ফুল ঝাড়ু ক্রয় করে তা ভালো দামে বাইরে বিক্রয় করা যায়। এছাড়া কাপ্তাইয়ে পরিবহন ব্যবস্থা অনেক ভালো হওয়াতে দ্রুত সময়ে শহরে পৌঁছানো সম্ভব। তাই এটি অনেকের কাছে জনপ্রিয় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

ট্রাকে ফুল ঝাড়ু গুছিয়ে রাখছেন শ্রমিকরা। ছবি: অর্ণব মল্লিক

কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ফুল ঝাড়ু পৌঁছে দিচ্ছেন ট্রাক চালক ইলিয়াছ, রহমান আলীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কাপ্তাইয়ের সঙ্গে সরাসরি শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে অনেকটা কম পরিশ্রম ও স্বল্প মূল্যে এসব ফুল ঝাড়ু গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়। পাশাপাশি কাপ্তাই সড়কে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির ফলে অনেক ঝামেলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

তবে চালকদের অভিযোগ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বর্তমানে পরিবহন ব্যয় অনেকটা বেড়ে গেছে। যার ফলে বর্তমানে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছরের এ মৌসুমে রাঙামাটির দুর্গম বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি এবং কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা এসব ফুল ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর