লোকাল করেসপনডেন্ট
জুরাছড়ি: রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়ন। উপজেলা সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটর দূরবর্তী এই ইউনিয়নে ছয়টি ওয়ার্ডজুড়ে ৩৪টি পাহাড়ি গ্রাম রয়েছে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই জুম চাষী। এ এলাকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ থাকলেও শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক পর্যায় শেষ হওয়ার পর আশপাশে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষাগ্রহণ থেকে ঝড়ে পড়ে। ঝড়ে পড়া রোধে স্থানীয় অবিভাবকরা দুমদুম্যা ইউনিয়নের বরকলক গ্রামে ২০০৭ সালে একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিনাবেতনে স্থানীয় কিছু যুবক পাঠদান শুরু করেন। পরবর্তীতে পাড়াবাসী চাঁদা তুলে একজন প্রধান শিক্ষক, ১১ জন সহকারী শিক্ষকসহ মোট ১৫ জনকে নিয়োগ প্রদান করেন।
দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তরুন মনি চাকমা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও দুমদুম্যা ইউনিয়নে সরকারিভাবে মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ইউনিয়নের শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে পড়ালেখার ইতি টানতে হয়।’
ডানে তেছড়ির সুন্দর মালা চাকমা, বরকলক গ্রামের সোবী চাকমা, দজরী পাড়ার হেমন্ত চাকমা, গাছতলী পাড়ার রেখা চাকমা বলেন, ২০০৫-০৬ সালে পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ার পর তাদের পড়াশোনা শেষ হয়। দারিদ্রতা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় জুরাছড়ি সদরে গিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। ফলে প্রাথমিকে লেখাপড়া শেষ হয় তাদের।
বরকলক নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মীরাজ চাকমা বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পাড়ার মানুষ চাঁদা তুলে আমাদের বেতন দেন। অনেক অবিভাবকের বেতন দেওয়ারও সামর্থ্য নেই। আমাদের বেতন নিয়মিত হয় না। আমরা আজকে আছি কালকে নেই- এমন অবস্থা। বেতন কম হওয়ার কারণে অন্যান্য শিক্ষকরাও থাকতে চায় না। শিক্ষকরা না থাকলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হলে এ এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়বে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনিল বরণ চাকমা বলেন, এলাকার শতভাগ পাড়াবাসী জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। দারিদ্রতার কথা চিন্তা করে বিদ্যালয়ের পাঠদান অনুমতি ও এমপিওভুক্তির জন্য বহুবার আবেদন করেছি। ভুমি সমস্যার কারণে আর আনানো সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ের নামে খাস জমি বন্দোবস্তির জন্য ইতিমধ্যে জেলাপ্রশাসকের নিকট আবেদন করা হয়েছে। জেলাপ্রশাসক মহোদয় বিদ্যালয়ের নামে খাস জমি বন্দোবস্তি প্রদান করলে পাঠদান অনুমতি ও এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, দুমদুম্যা ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ বিদ্যালয়ের প্রতি সরকারকে নজর দিতে হবে।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে সরজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয়তার সুপারিশসহ জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।’