শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় রাঙামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। শেষ দিন শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) পুণ্যার্থীদের সাধু সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে বিহার প্রাঙ্গণ। এদিন সকালে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দেশ-জাতি তথা জগতের সকল প্রাণির হিতসুখ মঙ্গল কামনায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদর কাছ থেকে পঞ্চশীল গ্রহণ করেছেন। এরপর বুদ্ধমূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্টপরিস্কার দান, কল্পতরু দান, পিণ্ডদানসহ নানাবিধ দান সম্পন্ন করা হয়। দুপুরে ভান্তেদের কঠিন চীবর (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দানের মধ্য দিয়েই সাঙ্গ হয় চীবর দানোৎসবের।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন তীর্থস্থানখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী ৪৮তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়। প্রথম দিন বিকালে বেইন কর্মীদের পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু প্রথম দিনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। এরপর বেইন ঘর উদ্বোধন, চরকায় সুতা কাটাম সুতা লাঙানো, রঙ করা, রাতভর বেইন বুনাসহ অন্যান্য ধর্মীয় কাজ করা হয়। শেষ দিন ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা।
দুপুরে কল্পতরু প্রদক্ষিণ করা হয় বিহার প্রাঙ্গণে। পরে পূণ্যার্থীদের চীবর দান শেষে দেন ধর্মীয় দেশনা বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। কঠিন চীবর দানোৎসবে কয়েক হাজার বৌদ্ধ ধর্মাবম্বীদের অংশগ্রহণে পৃথিবীর সকল প্রাণির শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। শেষ দিনের চীবর দানোৎসবে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, চাকমা সার্কেল চিফ (চাকমা রাজা) ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, চাকমা সার্কেল চিফের সহধর্মিণী (চাকমা রাণী) য়েন য়েনসহ উপাসক-উপাসিকা, পূণ্যার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন: চরকায় সুতা কেটে রাজবন বিহারে শুরু চীবর দানোৎসব
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, বৌদ্ধদের যত ধরণের দান রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে পূণ্যের দান হলো কঠিন চীবর দান। এজন্য কঠিন চীবর দানোৎসবকে দানোত্তম চীবর দান উৎসব বলা হয়ে থাকে। এবছর রাজবন বিহারে প্রায় দুইশ’ বেইন ও দেড় শতাধিক চরকার সাহায্যে ৬ শতাধিক দায়ক-দায়িকা চীবর বুনার কাজে অংশগ্রহণ করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটির রাজবন বিহারে সবচেয়ে জমকালো আয়োজনে চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পাহাড়ে কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হওয়ার পর একেবারে শেষদিকেই রাজবন বিহারে চীবর দানোৎসব হয়। তবে বিভিন্ন বিহারে এরপরও চীবর দানোৎসব হয়ে থাকে। রাজবন বিহারের চীবর দানে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অংশ নেন। তাই এটিকে বলা হয় দেশের সবচেয়ে বড় চীবর দানোৎসব।