প্রান্ত রনি, শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠান বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সোমবার বিকালে (৩ এপ্রিল) পাঁচ দিনব্যাপী মেলা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের সবচেয়ে বড় এই সামাজিক উৎসবের সূচনা হলো।
৩-৭ এপ্রিল পর্যন্ত এবারের ৫ দিনব্যাপী মেলা উপলক্ষে এদিন বিকেল ৪টায় রাঙামাটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে জেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।
পরে পাহাড়ি নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়। একই সময়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমতাজ উদ্দিন, জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, জেলা পরিষদ সদস্য হাজী মো. মুছা মাতব্বর প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া। আরও বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ সদস্য ঝর্না খীসা, বাংলাদেশ খিয়াং কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পাইথুই খিয়াং, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার রাঙামাটি সদর উপজেলা শাখার সভাপতি বিশ্বজিৎ তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিদ্যুৎ ত্রিপুরা, মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) নেতা মংউচিং মারমা ও জেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রুনেল চাকমা প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, “পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিজেদের রক্ষা করতে হবে। ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে লালন-পালনের মধ্য দিয়ে এটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। পাহাড়ের অধিবাসীদের প্রধান এই সামাজিক অনুষ্ঠানে একে-অপরের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটে। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড়ের মানুষ এই উৎসব উদযাপন করে আসছেন।”
আয়োজকরা জানায়, অন্যান্য বছর বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই মেলায় স্টল দেওয়ার মতো আশানুরূপ আবেদন পাওয়া না গেলেও এবছর সর্বাত্মক আবেদন জমা পড়েছে। তারমধ্যে ৫০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পোশাক, খাবার, গয়নাসহ মোট ৮০টি স্টল বসেছে।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট চত্বরে আয়োজিত ৫ দিনব্যাপী মেলা চলবে আগামী ৭ এপ্রিল সোমবার পর্যন্ত। আগামী চার দিনের মেলায় ঘিলা খেলা, বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ, নাটক মঞ্চায়ন, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা, হাড়িভাঙা ও শিশুদের বিভিন্ন খেলা, পাজন রান্না প্রতিযোগিতা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
আরও পড়ুন: ১২ এপ্রিল কাপ্তাই হ্রদে ভাসবে ‘বিঝুর ফুল’
এদিকে, আগামী ১০-১২ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী পৃথক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, সাংক্রান উদযাপন কমিটি। তিনদিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে প্রথম দিন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, দ্বিতীয় দিন বিভিন্ন খেলার আয়োজন ও শেষদিন পানিতে ফুল ভাসানো অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।