শিজক রিপোর্ট
বান্দরবান: কয়েকদিন ধরে অব্যাহত থাকা বৃষ্টিপাত কমায় পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে শহরের পানি একেবারে না কমায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ চলাচল এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকটও।
জেলার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত কমার কারণে নতুন করে পানি বাড়ছে না; যে কারণে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। তবে বান্দরবান-কেরানীহাট-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হলুদিয়া, বায়তুলইজ্জত এলাকায় সড়কে পানি থাকায় এখনো বান্দরবান জেলার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে তিনদিন ধরে। পাহাড় ধসের বন্ধ রয়েছে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এদিকে, জেলা সদরের মেম্বার পাড়া, আর্মিপাড়া, শেরেবাংলা নগর, ইসলামপুর, ওয়াপদা ব্রিজ এলাকা এবং লামা, আলীকদম উপজেলায় এখনো পানিবন্দি রয়েছে হাজারো পরিবার। জেলার ৭ উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে ২০ হাজারের অধিক মানুষ। মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও বিদ্যুৎহীন এখনো।
এদিকে, বুধবার জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি থেকে খংচা মারমা নামে আরও একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে, সদর উপজেলার কালাঘাটা গুদারপাড় এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ে মৃত্যু ও আলীকদমে বন্যার পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। এ পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ জনে। সদর উপজেলা টংকাবতী ও নাইক্ষ্যংছড়িতে দুইজন নিখোঁজ আছেন।
বান্দরবান পৌরসভার মেয়র সৌরভ দাস শেখর জানিয়েছেন, ‘বিগত তিন দশকেও এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি বান্দরবানের মানুষ। বুধবার থেকে জেলার বিভিন্ন প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে বন্যার পানি নামছে। এসব এলাকাগুলো কাঁদামাটি ও আবর্জনায় ভরে আছে; পরিচ্ছন্নতায় কাজ করছে পৌরসভা।’
জেলা পরিষদ সদস্য ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অদিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বাহাদুর জানালেন, ‘পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সবগুলো মেশিন অকেজো প্রায় হয়ে পড়েছে। মেরামত না করা পর্যন্ত সচল করা যাচ্ছে না। দ্রুত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার দুপুরে বান্দরবান জেলাপ্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বান্দরবান জেলার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লামা ও সদর উপজেলা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এক সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
বান্দরবানের সমাজকর্মী ডনাই প্রু নেলি শিজক ডটকমকে বলেন, ‘বান্দরবানে হঠাৎ করেই যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলো এমন বন্যা পরিস্থিতি আমরা বিগত কয়েক দশকেও দেখেনি। দিনে দিনে এখানে গ্রামীন ছড়াগুলো দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে নানানভাবে। বৃক্ষ নিধন ও ছড়ার পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী যারা বসবাস করছেন তাদের বেশির ভাগ বাড়িঘর ও অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে নদীর তীরঘেঁষে করে এতে করে নদীপথও ছোট হয়ে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বান্দরবানের শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। এখানে ড্রেন নির্মাণ করা হলেও এসব ড্রেন নিয়ে দিয়ে ঠিকমত পানি প্রবাহ হচ্ছে না। এসব কারণে বান্দরবানে পানির জট তৈরি করে হলো। জলজট থেকেই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব। আমার নিজের বাড়িটিও বন্যা প্লাবিত হয়েছে। গত তিনদিনের ঘর থেকে বেরুতে পারিনি।’
পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবান চেপ্টারের চেয়ারপারসন জুমলিয়ান আমলাই বলেন, ‘বান্দরবানে যেভাবে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে, বন্যা হওয়া স্বাভাবিক। এটাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা যেতে পারে।’