রবিবার, নভেম্বর ১০, ২০২৪

মাটিরাঙার কৃষকের ‘টাকা খেয়েছে’ কারা?

শিজক রিপোর্ট
খাগড়াছড়ি: জেলার মাটিরাঙার প্রত্যন্ত জনপদ তবলছড়ি ইউনিয়নের সিংহ পাড়ার প্রান্তিক কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের (হাইব্রীড) সমলয় প্রকল্পের কৃষক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ, চারা রোপণ, কর্তন পর্যন্ত প্রণোদনা থেকে ব্যয় হওয়ার কথা। অথচ সরকারি প্রণোদনার কানাকড়িও পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন এই কৃষক।

রফিকুল ইসলাম বলেন, “‘প্রতি বছর সরকারিভাবে বিভিন্ন সহায়তা পাই। কিন্ত এবছর কিছুই পাইনি। আমি নিজের খরচে দুই কানি (৮০ শতক) ৫ গন্ডা ( ১০ শতক) জমিতে চাষাবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আমি কোন সহায়তা পাইনি, এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত না। তারপরও এই প্রকল্পে কীভাবে নাম আসল তা বলতে পারব না।’

প্রণোদনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত একই এলাকার কৃষক মো. ইউনুস মিয়া বলেন, “তালিকায় যে আমার নাম আছে এটা আপনার মাধ্যমে প্রথম জানলাম। আমি সার,বীজ,রোপণের টাকা কোন কিছুই পাইনি। প্রণোদনার টাকা দূরে থাক আমার নাম যে আছে তাও জানি না। সমলয় প্রকল্পে আমি অর্ন্তভুক্ত নই। তারা আমাকে কোন দিন উঠান বৈঠক বা কোন মিটিংয়েও ডাকেনি।”

তালিকায় থাকা মো. বেল্লাল হোসেন নামে আরেক কৃষক জানান, “চলতি বোরো মৌসুমে আমি কোনো টাকা, বীজ, সার কিচ্ছু পাইনি।’ তালিকায় কীভাবে নাম আসল তাও জানে না এই কৃষক। প্রণোদনার কোনো অর্থ পাননি দাবি তালিকভুক্ত কৃষক এয়াকুব আলীরও। তিনি জানান, “সার, বীজ, একাউন্টে কোনো টাকা পায়নি। এক কানি জমিতে চাষ করেছি । আমার ২৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ আমি কিচ্ছু পাইনি। আমাদের টাকা, সারকে নিল তাতো আমরা জানি না।”

সিংহ পাড়া এলাকার কৃষক মো.আবদুল মান্নান সমলয় প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৈরি তালিকায় তার নাম থাকলেও তিনি জানান, “বোরো চাষাবাদের জন্য আমি কোন প্রণোদনার টাকা পায়নি। নিজের অর্থ খরচ করে চাষাবাদ করেছি।”

জানা যায়, সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার একটি সমবায়ভিত্তিক সমলয় পদ্ধতি । যেখানে একটি মাঠে বা মাঠের একটি অংশের কৃষক সবাই মিলে একই জাতের ধান একই সময়ের যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করবেন। এই পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা,চারা রোপণ ও ধান কাটা সব প্রক্রিয়াযন্ত্রেও সাহায্যে করা হবে।

সমলয় প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহ পাড়ায় বোরো ধানের (হাইব্রিড) চাষাবাদ করা হয়। তবে প্রকল্পের শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। মাঠে যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করার থাকলেও তা করা হয়নি । রোপণের যন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার অজুহাত কৃষকদের নিয়মবহির্ভুতভাবে নগদ অর্থ দেওয়া হলে তা পর্যাপ্ত ছিল না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কৃষক সবুজ মিয়া জানান, “আমি ৭ কানি (প্রতি সমান ৪০ শতক) জমিতে চাষাবাদ করেছি। চারা রোপণের জন্য আমাকে দিয়েছে মাত্র ১৫শ টাকা। কিন্ত রোপণ বাবদ আমার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তাদের রোপণ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্ত মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে বলে আর রোপণ করে দেয়নি।”

স্থানীয় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও তালিকাভুক্ত কৃষক মো. আহেম্মদ উল্লাহ কামাল, “যারা সহজ সরল কৃষক তাদেরকে প্রণোদনার কোনো অর্থ দেয়নি। চারা রোপণ কৃষি বিভাগের দায়িত্ব ছিল । কিন্ত তারা তা করেনি। চারা রোপণ করতে আমার খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা। তালিকার মধ্য থেকে ৩০ থেকে ৩৫ জন টাকা পেয়েছে।”

ফসল উৎপাদন পর্যন্ত কীটনাশকের ব্যবহারের জন্য ৯টি উঠান বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র দুইটি। মাটিরাঙা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সবুজ আলী স্বাক্ষরিত কৃষকের তালিকায় ৭৩ জনের নাম পাওয়া গেলেও প্রণোদনার সার, বীজ, নগদ অর্থ কোনো কিছুই পায়নি অনেক কৃষক।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙা উপজেলা কৃষি অফিসার মো.সবুজ আলী জানান, ‘প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়নি। এই নিয়ে দুটো উঠান বৈঠক হয়েছে। কৃষকদের জন্য নগদ অর্থ ধরা নেই ,কিন্ত মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষক প্রতি ১৫শ’ টাকা দেয়া হয়। আমি একেবারে জোর দিয়ে বলতে পারি আমরা দিক থেকে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল বলেন, “এই বিষয়ে আমি আপনার কাছে প্রথম শুনেছি। না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা।”

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর