রবিবার, নভেম্বর ১০, ২০২৪

মাতৃভাষার বই পেল পাহাড়ি শিশুরা

শিজক ডেস্ক
রাঙামাটি: সারা দেশের মতো পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতেও প্রাথমিকের বই বিতরণ করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একইদিন মাতৃভাষায় বই পেয়েছে পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। এতে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

সোমবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় জেলা শহরের গৌধূলী আমানতবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) হৃষীকেষ শীলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।

উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরিন সুলতানা, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৌশিক চাকমা প্রমুখ। এসময় নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন জেলাপ্রশাসক।

জানা গেছে, দেশের সংখ্যায় ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তার ভাষা সংরক্ষণের জন্য ২০১৭ সাল থেকে তিন পার্বত্য জেলায় চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে মাতৃভাষার বই। পাশাপাশি শুরু হয় মাতৃভাষায় পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয়র নিজ নিজ সম্প্রদায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পর তাদেরকে দিয়ে পরিচালনা করা হয় পাঠদান কার্যক্রম।

সারা দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে বই উৎসব চললেও পাহাড়ের বই উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ দিয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে মাতৃভাষায় বই বিতরণ। প্রথম দিনেই জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে তুলে দেয়া হয়েছে নিজ মাতৃভাষার বই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, এ বছর রাঙামাটি জেলায় ২৮ হাজার ১৫৫ জন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করা হবে ৬৩ হাজার ৪৬৮টি বই। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে এই বই। এরমধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৭ হাজার ৯ জন, প্রথম শ্রেণীর ৭ হাজার ৪৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৭ হাজার ১০৯ ও তৃতীয়য় শ্রেণী ৬ হাজার ৯৯৪ জন শিক্ষার্থী মাতৃভাষায় বই পাবে। অন্যদিকে, জেলার দশ উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৯টি সাধারণ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে।

বই পেয়ে শিক্ষার্থী আকৃতা চাকমা ও যশমিত্রা চাকমা বলেন, ‘আমরা শিশু শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উঠেছি। আমাদের নতুন বই পেয়ে অনেক ভালো লাগতেছে। আমরা খুব খুশি হয়েছি।’ অভিভাবকরা বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের ভাষায় বই পেয়েছে এতে আমরাও অনেক খুশি। তবে শুধু বই দিচ্ছে কিন্তু শিক্ষক নাই। যদি স্কুল থেকে শিক্ষক দেয় তাহলে বাচ্চারা নিজেদের মাতৃভাষা শিখতে পারবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেষ শীল বলেন, ‘পার্বত্য জেলার জন্য মাতৃভাষা যে বইটি সরকার চালু করেছে সেই বইগুলো শতভাগ আমাদের কাছে চলে এসেছে এবং ইতিমধ্যে সেগুলো আমরা বিদ্যালয়ও পৌঁছে দিয়েছি। আজকে সারা দেশে উদ্বোধনের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থী হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্য জেলা পরিষদের সহায়তায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষা শিক্ষা প্রদানের প্রশিক্ষণটি শুরু করেছি এবং এ বছরও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা আবার প্রশিক্ষণটি শুরু করব।’

জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষা শিক্ষাটি ধরে রাখার জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকায় আজকেও রাঙামাটিতে উৎসব মুখর পরিবেশে সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের স্ব স্ব মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর