স্পেশাল করেসপনডেন্ট
রাঙামাটি: পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে আমন ধান সংগ্রহ মৌসুমের নির্ধারিত সময়েও কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ। নির্ধারিত সময়ের পর আরও এক সপ্তাহ ধান সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচি বৃদ্ধি হলে প্রায় তিনমাস ২০ দিনের অভিযানেও এক ছটাক ধান সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নির্ধারিত ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাজারদর বাড়তি হওয়ায় ও পরিবহন খরচের বাড়তি চাপের কারণে কৃষকরা সরকারি খাদ্যগুদামের কাছে ধান বিক্রয়ে অনাগ্রহী। তবে পাহাড়ি জেলায় দুর্গমতা ও ভৌগোলিক দিকবিবেচনায় সরকারের ক্রয়মূল্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় এবার ৩২৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। তবে চাল সংগ্রহের কোনো লক্ষ্যমাত্রা ছিল না। কিন্তু ৩২৮ মেট্রিকটন ধান লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক ছটাকও ধান সংগ্রহ হয়নি। অন্যদিকে গতবছর (২০২১-২২ আমন মৌসুমে) ৩৬১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১১৯ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ হয়েছিল। কিন্তু এবার মোটেই সংগ্রহ হয়নি। এ মৌসুমে প্রতি কেজি আমন ধানের দাম ধরা হয়ে ছিল ২৮ টাকা; যা বাজারদরের চেয়ে কম বলেও মানছে খাদ্য বিভাগ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের খাদ্য পরিদর্শক তরুণ বিকাশ চাকমা বলেন, চলতি আমন ধান সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচির নির্ধারিত সময় ছিল ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ের পরবর্তীতে ৭ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে আরও এক সপ্তাহ অভিযান কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বর্ধিত সময়ের মধ্যেও আমাদের কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। এবছর আমন ধান ক্রয়ের সরকার নির্ধারিত ছিল কেজি প্রতি ২৮ টাকা দরে। মূলত কৃষি বিভাগ থেকে নিবন্ধিত কৃষকদের যে তালিকা দেয়া হয়, সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা ধান সংগ্রহ করে থাকি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) রাঙামাটি কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ মৌসুমে রাঙামাটির দশ উপজেলায় ১০ হাজার ৮০ হেক্টর জমির আমন ধান কর্তন করা হয়েছে। এর বিপরীতে ২৭ হাজার ৭৩৩ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হয়েছে। তন্মধ্যে উফশী (উচ্চফলনশীল) জাতের ২৭ হাজার ৪৩৯ মেট্রিকটন ও স্থানীয় জাতের ২৯৪ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হয়েছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আবু মো. মনিরুজ্জামান শিজক ডটকমকে বলেন, ‘সমতলের জেলাগুলোর চেয়ে পাহাড়ি জেলায় ধান আবাদ ও উৎপাদন কম হয়ে থাকে। অনেক কৃষক উৎপাদিত ধান নিজের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য রাখেন। বাড়তি থাকলেও সেগুলো ধান থেকে চাল তৈরি করে বিক্রয় করে থাকেন। তবে বর্তমান সময়ে সরকার নির্ধারিত ধানের যে দর রয়েছে, তার চেয়ে বাজারদর কিছুটা বেশি হওয়ায় কৃষকরা খাদ্য বিভাগের কাছে ধান বিক্রয় অনাগ্রহ দেখান। সারাদেশে ধান বিক্রয়ের জন্য কৃষকদের যে পরিবহন খরচ ব্যয় হয় থাকে সে তুলনায় পাহাড়ি জেলায় পরিবহন খরচ অনেকটা বেশিই। সেক্ষেত্রে যদি সারাদেশের চেয়ে পাহাড়ি জেলায় ধানের বাজারদর বাড়তি হতো তাহলে অনেকেই ধান বিক্রয়ে উৎসাহি হতেন। অন্যদিকে খাদ্যবিভাগ যদি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ধান সংগ্রহ অভিযান করতে পারে সেক্ষেত্রে কৃষকদের পরিবহন খরচের বাড়তি চাপ থাকবে না।’
রাঙামাটি বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত মেসার্স তন্নয় অটো রাইস মিলের মালিক তপন কান্তি পাল শিজক ডটকমকে জানান, ‘আমাদের আমনের ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ। সামনের বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে। চলতি বছরে আমরা এক মণ আমন ধান ১১শ’ টাকা হারে সংগ্রহ করতে হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে থাকি। লংগদু ও মহালছড়ি উপজেলাসহ অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ী নৌ-পথে ধান করে অমাদের কাছে পৌঁছান।’
এদিকে, আমন ধান সংগ্রহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কানিজ জাহান বিন্দু শিজক ডটকমকে জানান, ‘এ বছর আমন ধানে ৩২৮ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের কোনো ধান সংগ্রহ করা হয়নি। পরবর্তীতে আরও এক সপ্তাহ দেশব্যাপী ধান সংগ্রহ কর্মসূচি বাড়ানো হলেও তাতেও ধান সংগ্রহ হয়নি ‘
কেন ধান সংগ্রহ হচ্ছে না- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘সরকারি নির্ধারিত যে দর দেয়া হয়েছে তার থেকেও বাজারদর বেশি হওয়ায় কৃষকরা আমাদের কাছে ধান বিক্রয় করছেন না। অন্যদিকে রাঙ্গামাটি জেলা ভৌগোলিক কারণে দুর্গম হওয়ায় হওয়ায় এখানকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের আমাদের কাছে ধান বিক্রয় করার জন্য যাতায়াত, পরিবহন ব্যয় বাড়তি খরচ হওয়ায় তারা স্থানীয়ভাবে বিক্রয় করে থাকেন। আর দুর্গম অঞ্চল হওয়ার কারণে আমরাও কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে পারি না।’