শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

রাঙামাটিতে ঝুঁকিতে থেকেও আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে অনীহা

প্রান্ত রনি, শিজক রিপোর্ট
রাঙামাটি: শনিবার সকাল থেকে রাঙামাটি জেলায় মুষলধারে বৃষ্টিপাতের প্রভাবে পাহাড় ধসের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। যে কারণে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রের নিয়ে আসার তৎপরতা আরও বাড়িয়েছে প্রশাসন। তবে আশানুরূপভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন না ঝুঁকিতে থাকা মানুষ।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, রাঙামাটি শহরের ১৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কেবল বাংলাদেশ বেতারের আশ্রয়কেন্দ্রের ১০-১৫ জন মানুষ এসেছেন। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাত পর্যন্ত যদি মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে; সেক্ষেত্রে ঝুঁকিতে মানুষজনের আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে আসার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গত শুক্রবার সকাল থেকে জেলা শহরের রূপনগর, শিমুলতলী, মুসলিম পাড়া, ভেদভেদীসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসলেও ঝুঁকিতে থাকা মানুষেরা আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে আসছেন না। শনিবার বিকালেও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বাস করা বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য বললেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: কাপ্তাই হ্রদে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও সহকারী কমিশনার বিজয় কুমার জোয়ার্দার জানান, ‘জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আজ বিকালেও ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রের আশ্রয়কেন্দ্রে ১০-১৫ জন এসেছেন। যারা এসেছেন তারা জানিয়েছেন আরও মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসবেন; তারা অনেককেই আনতে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টিপাত বেড়েছে, আমরা আশা করছি মানুষ রাতের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে আসবেন। যারা রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকবেন, তাদের জন্য খাবার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রাঙামাটিতে

রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, ‘আপনারা বিষয়টি অবগত আছেন আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন একযোগে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে থাকাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আসার জন্য কাজ করছি। এক্ষেত্রে অনেকেই আসতে চাইছেন না, বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বৃষ্টিপাত যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

এদিকে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে রাঙামাটির ঘাগড়া-বরইছড়ি সড়কের ওপর ছোট-খাটো পাহাড় ধসের খবর পেয়েছি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে যতটুকু জেনেছি সড়কে যান চলাচল বন্ধের মতো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়নি।’

রাঙামাটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাঙামাটিতে ৭৭.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল ৯৪ মিলিমিটার।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সে বছর রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি অংশ ধসে সপ্তাহব্যাপী সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। দুই সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি আঞ্চলিক মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল।

২০১৮ সালে জেলায় নানিয়ারচরে ১২ জুন পাহাড় ধসে মারা যান আরও ১১ জন। এরপরের বছর জেলার কাপ্তাইয়ে মারা গেছেন তিন জন। যে কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলেও রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়ে থাকে।

সম্পর্কিত খবর

সোশ্যাল মিডিয়া

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ খবর